বায়োইনফরমেটিক্স (Bioinformatics)
বায়োইনফরমেটিক্স
তথ্য প্রেরণ, আরোহণ এবং জৈব সিস্টেম প্রক্রিয়াকরণের গুরুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৮ সালে Prof. Dr. Paulien Hogeweg নামের একজন গবেষক তথ্য প্রক্রিয়াকরণে জীবন সম্পর্কিত সিস্টেমে গবেষণায় বায়োইনফরমেটিক্স শব্দটি ব্যবহার করেন। বায়োইনফরমেটিক্সে ব্যবহৃত ডেটা হলো জৈব তথ্য। জৈব তথ্যে DNA, জিন, এমিনো এসিড এবং নিউক্লিক এসিডসহ অন্যান্য তথ্য থাকে।
বায়োইনফরমেটিক্স বা জৈব তথ্যবিজ্ঞান হলো এমন এক প্রযুক্তি যা ফলিত গণিত, তথ্যবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার বিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রসায়ন এবং জৈব রসায়ন ব্যবহার করে জীববিজ্ঞানের সমস্যাসমূহ সমাধান করে।
উইকিপিডিয়ার একটি উদ্ধৃতি অনুযায়ী “বায়োইনফরমেটিক্স হলো এমন একটি আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র যা জীব সংক্রান্ত ডেটা বিশ্লেষণ করে বুঝানোর জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি এবং সফটওয়্যার টুলস উন্নয়ন করে।”
কম্পিউটার কেন্দ্রিক জীববিজ্ঞান অনেক সময় সিস্টেমস জীববিজ্ঞানের সমতুল্য হয়ে যায়। জীব সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনার কাজে কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রয়োগই হলো বায়োইনফরমেটিক্স। মূলত জীববিজ্ঞানের আণবিক পর্যায়ের গবেষণাই এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়। যখন জৈব তথ্য নিয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে গবেষণা করা হয় তখন তাকে ড্রাই ল্যাব বলে। ড্রাই ল্যাবে বিজ্ঞানীরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নানা ধরনের বিশ্লেষণ করে ত্রিমাত্রিক মডেলিং, সিম্যুলেশন বিশ্লেষণ করে।
বায়োইনফরমেটিক্সে ব্যবহৃত সফটওয়্যার :
বায়োইনফরমেটিক্সের জন্য সাধারণ ব্যবহৃত সফটওয়্যার হলো- Java, C, C++, Python, SQL, C#, XML, Perl, Spreadsheet Applications (MS-Excel)। এছাড়াও ওপেনসোর্স বায়োইনফরমেটিক্স সফটওয়্যার হিসেবে CUDA, MATLAB, EMBOSS, Bioperl, Biojava, UGENE ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।-
বায়োইনফরমেটিক্স এর কাজ :
- ডিএনএ ক্রস থেকে প্রোটিন সিকুয়েন্স নির্ণয় করা।
- প্রোটিন সিকোয়েন্স থেকে প্রোটিন স্ট্রাকচার নির্ণয় নির্ণয় করা।
- প্রোটিন স্ট্রাকচার থেকে প্রোটিনের কাজ নির্ণয় করা।
বায়োইনফরমেটিক্সের উদ্দেশ্য :
জৈবিক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুধাবন করা। বিশেষ করে জীবের জীন বিষয়ক তথ্য অনুসন্ধান করা।
রোগ-বালাইয়ের কারণ হিসেবে জীনের প্রভাব সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করা।
ঔষধের গুণাগুণ উন্নত ও নতুন ঔষধ আবিষ্কারের প্রচেষ্টা করা।
বায়োইনফরমেটিক্স এর ব্যবহার :
বিভিন্ন গবেষণা ক্ষেত্রে বায়োইনফরমেট্রিক্স ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- প্যাটার্ন রিকোগনিশন, ডেটা মাইনিং, জিন অনুসন্ধান বা জিনথেরাপি, জিনোম সমন্বয়, মেশিন ল্যাংগুয়েজ অ্যালগরিদম, সিকুয়েন্স অ্যালাইনমেন্ট, প্রোটিনের গাঠনিক অ্যালাইনমেন্ট, প্রোটিন গঠনের ভবিষ্যদ্বাণী, প্রোটিন-প্রোটিন মিথস্ক্রিয়া, জিন বহিঃপ্রকাশ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী, বিবর্তনের নকশা প্রণয়ন। সলিকুলার মেডিসিনে, ঔষধ তৈরিতে, বর্জ্য পরিষ্কারকরণে, জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণায়, বিকল্প শক্তির উৎস সন্ধানে, জীবাণু অস্ত্র তৈরিতে এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া মাইক্রোবায়োলোজি, DNA, RNA, এইডস সংক্রান্ত জটিল সমস্যা, ক্যান্সার প্রভৃতি বিষয়ে বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহৃত হয়।
চিত্র- বায়োইনফরমেটিক্স এর প্রয়োগক্ষেত্র
বায়োইনফরমেটিক্স এর সুবিধা :
জীববিদ্যার উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করে।
আনবিক বংশগতিবিদ্যার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
জীববিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্যের গবেষণাতে তথ্যের সংরক্ষণ ও পুন:ব্যবহার নিশ্চিত করে।
বায়োইনফরমেটিক্স এর অসুবিধা :
জেনেটিক তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের আশংকা থাকে। এছাড়াও এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।
যেসব চিকিৎসা বায়োইনফরমেটিক্স নির্ভর সেগুলো সুনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করা না গেলে রোগীর এক ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
বায়োইনফরমেটিক্সের প্রয়োজনীয়তা :
জীববিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রেই বায়োইনফরমেটিক্স এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জীববিজ্ঞানের আণবিক পরীক্ষায় বায়োইনফরমেটিক্স পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জৈব তথ্যকে সাজিয়ে গুছিয়ে সংরক্ষণ করার জন্য শক্তিশালী ডেটাবেজ এবং ইনফরমেশন সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহারের মূল কারণ হচ্ছে এটি আমাদের কাজ অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।