অধ্যায়-১
অধ্যায় ভিত্তিক অনুশীলনী – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর / সৃজনশীল ও এমসিকিউ
MCQ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা
HSC_ICT_Chap_1st_অধ্যায় ভিত্তিক মডেল টেস্ট (101)
HSC_ICT_Chap_1st_অধ্যায় ভিত্তিক মডেল টেস্ট (102)
HSC_ICT_Chap_1st_অধ্যায় ভিত্তিক মডেল টেস্ট (103)
HSC_ICT_Chap_1st_অধ্যায় ভিত্তিক মডেল টেস্ট (104)
HSC_ICT_Chap_1st_অধ্যায় ভিত্তিক মডেল টেস্ট (105)
HSC_ICT_Chap_1st_অধ্যায় ভিত্তিক মডেল টেস্ট-রিভিশন-106
HSC_ICT_Chap_1st_অধ্যায় ভিত্তিক মডেল টেস্ট-রিভিশন-107
HSC_ICT_Chap_1st_অধ্যায় ভিত্তিক মডেল টেস্ট-রিভিশন-108
HSC_ICT_Chap_1st_অধ্যায় ভিত্তিক মডেল টেস্ট-রিভিশন-109
HSC_ICT_Chap_1st_অধ্যায় ভিত্তিক মডেল টেস্ট-রিভিশন-110
অধ্যায়-১ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
সম্পর্কে পুর্নাঙ্গ ধারণা পেতে সংক্ষিপ্ত আকারে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো পড়লে ভাল ফলাফলে সহায়ক হবে।
অধ্যায়-১ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
আমরা একটি শিল্পবিপ্লবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি যে বিপ্লবটিকে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করতে পারি। এই বিপ্লবটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এটি পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষের জীবনধারাকে স্পর্শ করেছে।
‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’ আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা।
কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন।
গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষন, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা এবং বিশ্বাসযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
বিশ্বগ্রাম ধারণা সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানগুলো-
যোগাযোগ (Communication)
শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, ম্যাসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে।
এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টেলিযোগাযোগ (Telecommunication) এবং তথ্য যোগাযোগ (Information communication) এই দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এক সময় তার-নির্ভর টেলিফোনই ছিল টেলিযোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।
বেতার টেলিযোগাযোগ আবিষ্কৃত হওয়ার পর আধুনিক টেলিযোগাযোগ যন্ত্রের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়াকিটকি ইত্যাদির ব্যবহার সর্বত্র ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।
ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট-নির্ভর সার্ভিস যেমন ই- মেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদির কথা বলা যায়।
ই-মেইল (E-mail) হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে বার্তা আদান-প্রদান পদ্ধতি। আজকাল একজন মানুষের প্রকৃত ঠিকানা থেকে তার ই-মেইল ঠিকানা বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং দিয়ে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ, তথ্য, ছবি এবং ভিডিও বিনিময় কিংবা সংবাদ প্রচারের কাজ করা হয়।
সামাজিক নেটওয়ার্কিং ব্যবহার করে পৃথিবীতে অনেক বড় সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছে।
ভিডিও কনফারেন্সিং পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীরা অডিও-ভিজুয়াল পদ্ধতিতে সভা করতে পারেন।
ইন্টারনেটভিত্তিক এই পদ্ধতিগুলোর ব্যাপক জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ সময় এবং অর্থের সাশ্রয়।
তবে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক নেটওয়ার্কিং-এর উপর বেশি নির্ভরতা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক সময়েই আসক্তির পর্যায়ে চলে যাবার কারণে পুরো পৃথিবীতেই এর ব্যবহার এখন আলাদাভাবে পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
কর্মসংস্থান (Employment)
উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে। আমাদের দেশেও বিগত প্রায় দু দশক ধরে বিভিন্ন দেশের চাকুরি ও নিয়োগ সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়ে কয়েকটি জব-পোর্টাল চালু আছে। এগুলোর মধ্যে www.bdjobs.com, www.chakri.com, www.everjobs.com ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং বলে।
আমাদের দেশে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে, এর ফলে অনেকের কাজের সুযোগ হয়েছে, অনেকে উদ্যোক্তা হিসেবে অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
উবার’ কিংবা ‘পাঠাও’ এর মতো সেবার কথা উল্লেখ করতে হয়, যেগুলো মান পরিবহনের ক্ষেত্রে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান করে দিয়েছে।
স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি কাজের স্থান ও সময়ের কোনো প্রধাধরা নিয়ম না থাকায় এ পেশার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই ধরনের চুক্তিভিত্তিক কাজকে রিল্যান্সিং – উদ্যোগের কাজ) বলা হয়। বিশ্বব্যাপী কয়েকটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস বা জন শেয়ারিং ওয়েবসাইট যেমন Upwork, Freelancer, Belancer, Fiverr ইত্যাদিকে ডেটা অ্যানালাইসিস, কপি রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এফিলিয়েট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), গুগল অ্যাডসেন্স, ভার্চুয়াল অ্যাসিসটেন্স, রিসার্চ এন্ড মার্কে, আর্টিক্যাল ব্লগ রাইটিং ইত্যাদি নানাধরনের বৈচিত্র্যময় কাজ
অবশ্য ফ্রিল্যান্সিং কাজের মাধ্যমে অর্থোপার্জন আপাতদৃষ্টিতে আকর্ষর্ণীয় মনে হলেও বিধর্মী জীবনযাপন বা পরিবার- রাত লেগে কাজ করা, দক্ষতা অনুযারী কাজ না পাওয়া, কাজের জোগান দিতে বাধ্য-মা-জনিত মানসিক চাপ, সরবরাহকৃত কাজের সার্থভাবে মূল্যায়ন না হওয়া বা পারিশ্রমিক পরিশোষের ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিলতা এবং সর্বোপরি পেশা হিসেবে সামাজিকভাবে স্বীকৃত না হওয়ায় অনেকেই এ ধরনের কাজে নিরুৎসাহিত বোধ করে থাকেন।
শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান,
শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
শিক্ষা বিস্তারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী উপকরণ যা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই অত্যন্ত কার্যকর।
এখন ই-বুকের কারণে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে সবাই পাঠ্যবই পেতে পারে। আমাদের দেশেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত সকল পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ই-বুক আকারে ডাউনলোড করা যায়।
২০২০ সালে সারা পৃথিবীব্যাপী Covid-19 সংক্রমণের সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইন শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেছেন।
শিক্ষকেরা নিজ ঘরে থেকেই অনলাইনের বিভিন্ন অ্যাপ (যেমন Google Meet, WebEx, Facebook messenger, imo, Skype, Whatsapp Zoom ইত্যাদি) ব্যবহার করে লাইভ-ক্লাসে সরাসরি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছেন। অনেক সময় বিষয়ভিত্তিক ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরির পর অনলাইনে শেয়ার, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্লগিং করে, বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছেন।
একজন শিক্ষার্থী ঘরে বসে অনলাইনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার ভিডিও দেখে, অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিয়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে।
গতানুগতিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের পরিবর্তে অনলাইনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইলেকট্রনিক মাধ্যম বিশেষত কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও ওয়েব ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার পদ্ধতিকে ই-লার্নিং বলে।
ই-লার্নিং এমন একটি প্রযুক্তিগত শিখন পদ্ধতি যেখানে অনলাইনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যে কোনো অবস্থানে থেকে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় (Interactive) পাঠদান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে। এটি সাধারণত অনলাইনে সুনির্দিষ্ট কোর্স, ডিগ্রি কিংবা প্রোগ্রাম শিক্ষায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহারে একসাথে অনেক শিক্ষার্থীকে পাঠদান সম্ভব হলেও, মানবীয় উপাদানের অনুপস্থিতির (Lack of human element) কারণে অনেক দেশেই এ ব্যবস্থা আত্মরিকতার সাথে গ্রহণ করা হচ্ছে না। তবে একটি দেশের উন্নয়ন কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দপ্তর-বিভাগ, কর্পোরেট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রমে এই শিক্ষা পদ্ধতির ব্যবস্থার যথেষ্ট কার্যকর।
চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য টেলিমেডিসিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়।
এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা রিপোর্ট ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেও রোগ নির্ণয় সহজতর হচ্ছে। অনেক সময় অনেক জটিল ধরনের অপারেশন করার ক্ষেত্রে এজন চিকিৎসক ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অন্য আরেকজন অভি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। Teladoc, Maven Clinic, Clinic, MDlive, Ammwell, Doctor on Demand, treatmentonline নামীয় অসংখ্য ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে অনলাইন চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়।
২০২০ সালে বৈশ্বিক অভিমারি Covid-19 এর প্রাদুর্ভাবের সময় ব্যবস্থাপত্রসহ স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রতিটি দেশে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট ফোন নম্বর সার্বক্ষণিক চালু রাখা হয়েছিল যার মাধ্যমে চিকিৎসকক্ষণ নানাভাবে দেশবাসীকে প্রতিনিয়ত টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করেছেন।
সঠিক রোগ নির্ণর হচ্ছে রোগীর যথাযথ চিকিৎসার পূর্বশর্ত।
ইলেকট্ৰনিক হেলথ রেকর্ড (EHR: Electronic Health Record) ব্যবস্থাপনা ডেটাবেজে রোগীর সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে এবং রোগী তার EHR ব্যবহার করে যে কোনো স্থান হতে তার রোগ সম্পর্কিত তথ্য, নিপা, চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র ইত্যাদি যে কোনো স্থানে বসে পেতে পারেন। এ ধরনের কাজ করতে যে i wou Therapy Notes, Epic care, Next Gen Ambulatory EHR, Care 360 ইত্যাদি।
যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন
পরিচালনা এবং সেগুলো থেকে ভেটা সংগ্রহ এর প্রতিটি ধাপেই তথ্য প্রযুক্তি বড় ভূমিকা রেখে থাকে।
গবেষণার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা ব্লগে প্রকাশিত হলে গবেষণার কার্যক্রম আরো গতিশীল ও স্বরান্বিত হয়। বিজ্ঞানী বা গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল, তথ্য-উপাত্তের মত বাচাই এবং সমগ্র
বিশ্বের সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের নিকট দ্রুততার সাথে প্রচার এবং সেগুলোর উপর পর্যবেক্ষণ, মতামত প্রদান ইত্যাদি প্রতিটি বিষয় বিশ্বগ্রাম ধারণার মাধ্যমে বাস্তবায়ন অত্যন্ত সহজসাধ্য হয়েছে।
অফিস (Office)
অফিস বা কর্মস্থল এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী তাদের পেশা সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেন। পৃথিবীর কোন প্রান্ত বা কোন দেশ থেকে সেই ফোনের বা সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আধুনিক অফিস ইকুইপমেন্টস, আইসিটি ও বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে অফিসের সার্বিক কার্যক্রম অত্যন্ত সহজে, স্বচ্ছতা এবং দৃশ্যমান গতিশীলতার সাথে করা সম্ভব হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে আর দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। এর ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
অনেকেই নিজ দেশে কিংবা অন্য দেশে থেকে বাসায় বসে কাজ করেন, অনেককেই নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা বজায় রাখতে হয় না। উত্তর আমেরিকার সাথে আমাদের প্রায় বারো ঘন্টা সময়ের পার্থক্য থাকার কারণে দুই মহাদেশে দুইটি অফিস রেখে, কয়েক শিফটে সেটি দিন-রাত্রি মিলে চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করতে পারে।
‘গুগল’ সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবহিত আছি, ড্রপবক্স গুগল ড্রাইভ, Office 365, Google docs ইত্যাদি সার্ভিসে আমরা আমাদের যাবতীয় ফাইল তৈরিসহ নিরাপত্তার সাথে সংরক্ষণ করতে পারি এবং বিশ্বের যে কোনো প্রাপ্ত থেকে সেখানে কাজ করতে পারি। অফিসের সবধরনের মিটিংয়ের ক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্সিং করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারি। তবে অফিস যান্ত্রিকায়নের ফলে অনভিজ্ঞ মানুষের কর্মসংস্থান কমে যায়। তেমনি গ্রাহকের সাথে ব্যবস্থাপনার মিথষ্ক্রিয়া (interaction) এবং একই সাথে সহকর্মীদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ হ্রাস পায়।
জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে তথ্য সরক্ষণের জন্য বড় বড় তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানির ডেটা সেন্টারগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করা হলে সবসময় একধরনের ঝুঁকি থেকে যায়।
বাসস্থান (Residence)
বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা। রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, কক্ষের তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধি করা, লাইটিং সিস্টেম, ঘরে বসেই বাজার করা, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ, চিত্তবিনোদন ইত্যাদি সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবন- যাপন অত্যন্ত আরামদায়ক ও সহজসাধ্য করে দিয়েছে।
এ ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home automation system) বলা হয়। সব ধরনের কাজে নানা ধরনের ডিভাইস যেমন— টেলিভিশন, সাউন্ড ব্যবস্থা, মিউজিক সিস্টেম, লাইট, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফায়ার সিস্টেম, পাওয়ার সিস্টেম, পর্দা উঠানো- নামানো, গ্যারেজ সিস্টেম, ভূমিকম্প সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, তাপ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
স্মার্ট হোম হলো একধরনের ওয়ান স্টপ সার্ভিস পয়েন্টের মতো, যেখানে বসবাসের জন্য সব উপযোজন পাওয়া যায় এবং গ্রাহককে ব্যবহার্য দ্রব্যাদির গুণগতমান নিশ্চিত করে এ সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা যায়।
আর্ট হোম ক্যামেরা এবং মোশন সেন্সর (Motion Censor) দিয়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুম কিংবা প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানির সাথে যুক্ত থাকে বলে বাসস্থানটি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকে এবং বাসস্থানের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়। বাসস্থানে কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থাকলে স্মার্ট হোম তার জন্য সত্যিকারের সহায়তা হতে পারে, কন্ঠস্বরের মাধ্যমে (সে কমান্ড) দরজা খোলা বা বন্ধ করা, লাইট, কম্পিউটার ও টেলিফোন নি কাজ তখন সহজেই করা সম্ভব হয়ে যায়।
হোম অটোমেশনে ব্যাপক আর্থিক বিনিয়োগ, জন্য, ক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ, কন্ঠস্বর বা ভয়েস নিয়ন্ত্রিত ডিরাইস ব্যবহারে বিড়ম্বনা ইত্যাদি সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য (Business )
পৃথিবীর কোনো দেশ এখন আর পরিপূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, যে দেশ যেটি উৎপাদন করে সেই দেশ সেটি রপ্তানি করে, এবং যে দেশে যেটি প্রয়োজন সেটি অন্য দেশ থেকে আমদানি করে।
শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর দেশের উন্নয়ন নির্ভরশীল।
উৎপাদিত পণ্য বা সেবার গুণগতমান অনলাইনের মাধ্যমে স্থানীয় এবং বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ক্রেতা বা ভোক্তাগণ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য আজকাল আর ভৌগোলিক সীমানায় আবদ্ধ নেই। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বিশেষত ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয়, সরবরাহ, ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন ইত্যাদি কাজকে সম্মিলিতভাবে ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বলে।
ই-কমার্স ওয়েব সাইটে পণ্যের গুণগত মান, বর্ণনা, ছবি ও মূল্য সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ থাকে। ই-কমার্সের পরিচিত কতকগুলো ওয়েব সাইট হলে www.bikroy.com, www.daraz.com, www.alibaba.com, www.amazon.com ইত্যাদি।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও ইতোমধ্যে ই-কমার্সের কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রযুক্তি শেয়ার ও স্থানান্তরের মাধ্যমে উন্নত হবে শিল্প কারখানাগুলো। বিশ্বমানের ব্যবস্থায় উৎপাদিত পণ্য হবে আন্তর্জাতিক মানের। ফলে সম্প্রসারিত হবে বৈশ্বিক ব্যবসা- বাণিজ্যের। এক্ষেত্রে লেনদেনে ব্যবহৃত হয় ইএফটি (EFT: Electronic fund transfer) যেটি এক ধরনের ইলেকট্রনিক লেনদেন যা সংঘটিত হয় কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কের সাহায্যে।
অনলাইন ব্যাংকিং নামে পরিচিত এই পদ্ধতিটিকে বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম পরিসেবা হিসেবে গণ্য করা যায়। এ ধরনের পদ্ধতিতে লেনদেনকে ইন্টারনেট ব্যাংকিংও বলা হয়। এই স্থাপনায় গ্রাহকগণকে লেনদেন সম্পন্নের জন্য সশরীরে কোনো ব্যাংক শাখায় মাওয়ার প্রয়োজন হয় না; বাড়িতে বা কর্মস্থলে কিংবা মণরত অবস্থাতেও এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। এজন্য শুধু কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট সংযোগ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হয়।
সংবাদ (News)
সব ধারণার একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। একটি ঘটনা মুহূর্তের মাঝে সারা পৃথিবীর সকল মানুষ
জেনে যেতে পারে।
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিউজ চ্যানেল, যেমন- এপি, রয়টার্স, ইত্যাদি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সংবাদগুলো আমার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে।
মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোও সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে আপডেট নিউজ প্রচার করছে।
বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
ইলেকট্রনিক মানির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি। স্যাটেলাইট বা ইন্টারনেটের কল্যাণে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এখন ঘরে বসেই পৃথিবীর যে কোনো অনুষ্ঠান উপভোগ করা সম্ভব।
এখন স্ট্রিমিং করে ইন্টারনেটে চলচ্চিত্র দেখার প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স হলিউডকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার পর্যায়ে চলে গেছে। এ ছাড়াও ইন্টারনেট গেমিং, আইপি টিভি (ইন্টারনেট প্রটোকল টিভি), ইউটিউবসহ আরো অসংখ্য অনলাইন বিনোদন মাধ্যম রয়েছে যেগুলো যে কোনো ব্যক্তি তার পছন্দসই গেম, ভিডিও, গান ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ও ডাউনলোড করতে পারে।
অনলাইন নিউজ, টিভি প্রোগ্রাম, গান, নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো স্থানে মুহূর্তের মধ্যেই নিজের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে দেখতে ও উপভোগ করতে পারছেন।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার, স্কাইপি ইত্যাদি ব্যবহার করে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের সাথে যোগাযোগসহ বিনোদন জগতের আপডেট তথ্য, ভিডিও, ছবি ব সহজেই পর্যবেক্ষণ এবং ‘লাইক’-এর মাধ্যমে জনমত যাচাই করতে পারছেন।
সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমান বিশ্বায়ন ব্যবস্থার প্রভাব সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। একসময় আমাদের দেশে “ভালোবাসা দিবস” বলে কোনো দিবস পালিত হতো না, এখন এদেশের তরুণদের কাছে এটি জনপ্রিয় একটি দিবস। আজকের বাংলাদেশি একজন কিশোর এবং একজন মার্কিন কিশোর একই সময়ে, একই ধরনের প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকার এবং ঐতিহ্য দিক ব্লগ, ওয়েবসাইট, চ্যানেল ইত্যাদিতে তুলে ধরতে হবে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual Reality)
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে কৃত্রিম বাস্তবতা, এবং মস্তিষ্কে একটি বাস্তব অনুবৃত্তি জাগায়।
অনেক সময় বিশেষ ধরনের চশমা বা হেলমেট পরা হয়, যেখানে দুই চোখে দুটি ভিন্ন দৃশ্য দেখিয়ে ত্রিমাত্রিক অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়। অনেক সময় একটি ক্ষিনে নিন ভিন্ন প্রজেক্টর দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃশ দেখিয়ে সেই অনুকৃতি সৃষ্টি করা হয়।
ব্যবহারকারীরা দেশে এবং স্পর্শ করে তাদের কাছাকাছি বোয়ারের বিশেষভাবে তৈরি চশমা বা সে
(HMD: Head Mountained Display) ছাড়াও অনেক সময় হাত গ্লাভস, স্যুট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটারে গ্রাফিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে দূর থেকে পরিচালনা করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। একে টেলিপ্রজেন্স বলা হয়।
এছাড়াও এ পদ্ধতিতে বাস্তবভিত্তিক শব্দও সৃষ্টি করা হয়, যাকে মনে হয়, শব্দগুলো বিশেষ কোনো স্থান হতে উৎসারিত হচ্ছে।
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব (Impact of Virtual Reality In everyday life)
বিনোদন ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিনোদনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাথে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
ত্রিমাত্তিক পদ্ধতিতে নির্মিত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নির্ভর কল্পকাহিনি, পৌরাণিক কাহিনি, কার্টুন মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
আজকালকার প্রায় প্রতিটি চলচ্চিত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার দেখা যায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে নানা ধরনের কম্পিউটার গেম সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মিউজিয়াম বা ঐতিহাসিক যেসব জায়গায় ভ্রমণ করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পদ্ধতি ব্যবহার করে সেইসব জায়গায় ভ্রমণ করার অনুভুতি পাওয়া সম্ভব হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে অগমেন্টেড রিয়েলিটি (Augmented Reality) নামে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির একটি নতুন রুপ জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে, যেখানে বাস্তব জগতের সাথে ভার্চুয়াল জগতের এক ধরনের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সবচেয়ে ব্যবহার হয়ে থাকে ফ্লাইট সিমুলেটরে যেখানে উড্ডয়নের পূর্বেই বিমান পরিচালনা।
কোনো কাজ করার আগে কম্পিউটারে কৃত্রিমভাবে প্রয়োগ করে দেখাকে সিমুলেশান বলা হয়। শিখন-শেখানো কার্যক্রমে জটিল বিষয়গুলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে সিমুলেশন ও মডেলিং করে শিক্ষার্থীদের সামনে সহজবোধ্য ও চিত্তাকর্ষকভাবে উপস্থাপন করা যায়।
গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন, জটিল অণুর আণবিক গঠন, ডিএনএ গঠন যা কোনো অবস্থাতেই বাস্তবে অবলোকন সম্ভব নয় সেগুলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পরিবেশে সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখা সম্ভব হচ্ছে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুবৃহৎ পরিসরে এর ব্যবহার ব্যাপক। জটিল অপারেশন কৃত্রিম অঙ্গ-পতঙ্গ সংযোজন, ডিএনএ পর্যালোচনা ইত্যাদিসহ নবীন শল্য চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও রোগ নির্ণয়ে ব্যাপক হারে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে সত্যিকার যুদ্ধক্ষেত্রের আবহ তৈরি করে সৈনিকদেরকে নিখুঁত প্রশিক্ষণ করা ।
উৎপাদিত কিংবা প্রস্তাবিত পণ্যের গুণগত মান, গঠন, বিপণন, সম্ভাব্যতা যাচাই, মূল্যায়ন, বিপণন কর্মী প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সব ধরনের কার্যক্রমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সিমুলেশন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে একজন প্রাপ্তবয়স্ক যেভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পরিবেশে প্রতিক্রিয়া করে সে তুলনায় একজন কমবয়সির প্রতিক্রিয়া অনেক তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী। যথেচ্ছ ব্যবহার তাদের শিখন ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাম্প্রতিক প্রবণতা (Contemporary trends of ICT)
বাষ্পীয় শক্তির ব্যবহার দিয়ে প্রথম শিল্পবিপ্লবের শুরু হয়েছিল,
বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যাপক ব্যবহার ছিল দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব।
ইলেক্ট্রনিক্স এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার দিয়ে নতুন একটি (মতান্তরে একাধিক) শিল্পবিপ্লব শুরু হয়েছে।
যে সমস্ত দেশ আগের শিল্পবিপ্লবে অংশ নিয়েছিল তারা পরবর্তীকালে পৃথিবীর নেতৃত্ব দিয়েছিল। একই ধারাবাহিকতায় আমরা বলতে পারি যারা এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির শিল্পবিপ্লবে অংশ নেবে তারা ভবিষ্যতে পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই বিকাশ পৃথিবীর সকল মানুষের জীবনকে কোনো না কোনোভাবে স্পর্শ করেছে।
এই প্রযুক্তিটি মানুষের বৃদ্ধিবৃত্তির উপরে অনেকখানি নির্ভর করে, কাজেই প্রথমবারের মতো এটি পৃথিবীর ধনী-দরিদ্র সম্পদশালী কিংবা সম্পদহীন, অগ্রসর অথবা অনগ্রসর সকল জাতির জন্য সমান সুযোগের সৃষ্টি করেছে।
সে জাতি যতটুকু আগ্রাসী হয়ে এই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করবে সেই জাতি তত লাভবান হবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence)
চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি কিংবা বিশ্লেষণ ক্ষমতা মানুষের সহজাত, একটি যন্ত্রকে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, সেটিকে চিন্তা করানো কিংবা বিশ্লেষণ করানোর ক্ষমতা দেওয়ার ধারণাটিকে সাধারণভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়।
কিছুদিন আগেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছিল দূর ভবিষ্যতের একটি কাল্পনিক বিষয়।
এমন অ্যালগরিদম বা পদ্ধতি প্রয়োজন যার মাধ্যমে কম্পিউটার চিন্তা করে কোনো সমাধান বের করতে পারে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে ঠিক যেমনটা মানুষ বা অন্যান্য বুদ্ধিমান ধরণের পদ্ধতি এবং আলগরিদম নিয়েই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কাজ করে থাকে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের আওতায় বেশ কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে। মেশিন লার্নিং, রোবটিক্স, মেশিন লার্নিং (ডিপ লানিং), এন এল পি, স্পিচ (স্পিচ টু টেক্সট/টেক্সট টু স্পিচ),
রোবোটিক্স, ভিশন (ইমেজ প্রসেসিং)
কম্পিউটার ভিশন, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP), স্পিড প্রসেসিং ইত্যাদি। মেশিন লার্নিং-এর কাজ হচ্ছে এমনভাবে কম্পিউটারকে প্রশিক্ষণ দেয়া যেন সে কোনো সিস্টেম সম্পর্কে বিভিন্ন নিয়ম নিজেই শিখতে পারে এবং নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরে তা কাজে লাগাতে পারে।
রোবোটিক্স হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কাজে লাগিয়ে এক রোবট বা যন্ত্রকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করানোর বিদ্যা।
ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং যারা মানুষ সচরাচর যেসব ভাষা ব্যবহার করে (যেমন: বাংলা, ইংরেজি, আরবি) সেসব ভাষায় কম্পিউটারের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়।
কম্পিউটার ভিশন হচ্ছে ক্যামেরা দিয়ে একটা মেশিন যা দেখতে পায় তা থেকে বিভিন্ন তথ্য প্রকার উপায় ঠিক যেমনটা মানুষ চোখ দিয়ে করে থাকে।
স্পিচ প্রসেসিং হচ্ছে মূলত কম্পিউটারকে দিয়ে কথা বলানো ও শোনানোর কৌশল।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কাজে ব্যবহার করার জন্য বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা নানা ধরনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি হচ্ছে নিউরাল নেটওয়ার্ক যা কিছুটা মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করে।
মানবমস্তিষ্কে আছে অসংখ্য নিউরন, যারা পরস্পরের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করে বলেই মানুষ চিন্তা করতে পারে এবং বিভিন্ন অনুভূতি বোধ করতে পারে। কম্পিউটারের জন্য গাণিতিকভাবে এমন কিছু কৃত্রিম নিউরণ তৈরি করা হয়, যাকে পারসেপট্রিন (perceptron) বলা হয়ে থাকে। এই কৃত্রিম নিউরনগুলোকে বিভিন্ন স্তরে সাজিয়ে এদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে যে নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, তাকেই নিউরাল নেটওয়ার্ক বলে।
নিউরাল নেটওয়ার্কের কাজ হচ্ছে কিন্তু ইনপুট থেকে একটা নির্দিষ্ট আউটপুট কীভাবে পাওয়া যেতে পারে তেমন একটা ফাংশন শেখা।
সাধারণত একটি নিউরাল নেটওয়ার্কে তিনটি স্তর থাকে।
ইনপুট স্তর,
লুকায়িত স্তর (hidden layer) ও
আউটপুট স্তর।
ইনপুট আর আউটপুট স্তরের কাজ হচ্ছে কম্পিউটারকে যে ফাংশনটা শেখানো হবে যথাক্রমে তার ইনপুট গ্রহণ করা ও আউটপুট প্রদান করা। এবার যেকোনো ইনপুটের জন্য সঠিক আউটপুটটা পেতে হলে লুকায়িত স্তরের মানগুলো কীভাবে পরিবর্তন করতে হবে, সেটা ঠিক করার জন্য একটা প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
নিউরাল নেটওয়ার্কটিকে অনেক ধরণের ইনপুট দিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে থাকলে সে ধীরে ধীরে লুকায়িত সঠিক মানগুলো শিখে যায়, যা ব্যবহার করে পরবর্তীতে তাকে নতুন কোনো ইনপুট দিলেও সে তার জন্য সঠিক আউটপুটটি দিতে পারবে।
যত বেশি ডেটা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, নিউরাল নেটওয়ার্কটি কত ভালো কাজ করবে। লুকায়িত স্তরের সংখ্যা একটা না রেখে অনেকগুলো স্তর ব্যবহার করলে বেশ জটিল ফাংশন শেখা সম্ভব- এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডীপ লার্নিং (Doop Learning)
ডীপ লার্নিং-এর সাহায্যে ইদানিং কম্পিউটার দ্বারা বেশ কঠিন সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে, যা আজ থেকে ১০-১২ বছর আগেও ভাবা যেত না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানত C/C++, Java, MATLAB, Python, SHRDLU, PROLOG LISP CLISP, R ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা হয়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সবচেয়ে সফল ক্ষেত্র হিসেবে মেশিন লার্নিং-এর কথা বলা যায়। মেশিন লার্নিং- কে মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
সুপারভাইজড (Supervised) লার্নিং,
আনসুপারভাইজড (unsupervised) লার্নিং, এবং
রিইনফোর্সমেন্ট (reinforcement) লার্নিং,
Supervised Learning এ মেশিনকে কোনো কিছু শেখানোর জন্য অনেকগুলো উদাহরণ দেয়া হয়, যা থেকে তথ্য আহরণ করে সে শিখে যায় তাকে কী করতে হবে।
Unsupervised Learning-এ কম্পিউটারকে নির্দিষ্ট করে কিছু বলে নেয়া হয় না, অনেকগুলো ডেটা বিশ্লেষণ করে সে বুঝতে পারবে।
নিউরাল নেটওয়ার্কের গঠন- ইনপুট স্তর, লুক্কায়িত স্তর ও আউটপুট স্তর
Reinforcement learning-এর ক্ষেত্রে কম্পিউটারকে আলাদাভাবে কিছু শেখানো হয় না, নিজের মতোই কাজ করতে দেয়া হয়। কাজ শেষে তাকে শুধু বলা হয় কাজটা কতটুকু ঠিক হয়েছে বা ভুল হয়েছে, যাতে কম্পিউটার এর পরের বার তার আচরণ বা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে। এভাবে প্রথম প্রথম সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হবে, কিন্তু অনেকবার কাজটা করতে করতে সে ঠিকই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে।
বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর এমন কোনো ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহারিক প্রয়োগ নেই। যেমন চিকিৎসাবিদ্যা, অটোমোবাইল, ফাইন্যান্স, সার্ভেইল্যান্স, সোশাল মিডিয়া, এন্টারটেনমেন্ট, শিক্ষা, স্পেস এক্সপ্লোরেশন, গেমিং, রোবটিক্স, কৃষি, ই-কমার্সসহ স্টক মার্কেটের শেয়ার লেনদেন, আইনি সমস্যার সম্ভাব্য সঠিক সমাধান, বিমান চালনা, যুদ্ধক্ষেত্র পরিচালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর ব্যাপক ব্যবহার বর্তমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
রোবটিক্স (Robotics)
রোবট শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত, এই শব্দটি দিয়ে আমরা এখন
বোঝাই যেটি মানুষের কর্মকাণ্ডের অনুরূপ কর্মকান্ড করতে পারে।
বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত যে বিষয়টি রোবটের ধারণা, নকশা, উৎপাদন, কার্যক্রম কিংবা ব্যবহার বাস্তবায়ন করতে পারে তাকে রোবটিক্স বলা হয়ে থাকে।
সাধারণভাবে আমরা মানুষের আকৃতির একটি যন্ত্র কল্পনা করি, কিন্তু প্রকৃত রোবট তার কাজের উপর নির্ভর করে যে কোনো আকারের বা আকৃতির হতে পারে। আজ থেকে এক যুগ আগেও রোবটের মূল ব্যবহার গাড়ির ওয়েল্ডিং কিংবা স্ক্রু লাগানোর মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে রোবটের কার্যপরিধিও বেড়ে যেতে শুরু করেছে এবং এমন কোনো কাজ নেই যেখানে
রোবট ব্যবহার করা করা হচ্ছে না।
রোবটের গঠনে তিনটি নির্দিষ্ট বিশেষত্ব রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
১. একটি রোবট যে নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য তৈরি হয়, তার উপর নির্ভর করে একটি বিশেষ যান্ত্রিক গঠন হয়ে থাকে।
২. রোবটের যান্ত্রিক কাজ করার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকতে হয়।
৩. রোবটকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
মানুষের পক্ষে যে সব কাজ অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ যেমন- সমুদ্রের তলদেশে,
যে কোনো অনুসন্ধানী কাজে, মাইন ইত্যাদি বিস্ফোরক দ্রব্য নিষ্ক্রিয়করণে, নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রে, খনির অভ্যন্তরের কোনো কাজে, নদী-সমুদ্রের নিচে টানেল নির্মাণ ইত্যাদি কার্যক্রমে রোবট ব্যবহৃত হয়।
শিল্প-কারখানার শিল্পোৎপাদন কাজে, শিল্প-কারখানার ভারী বস্তু নড়াচড়া করানো, প্যাকিং, সংযোজন, পরিবহন ইত্যাদি শ্রমসাধ্য কাজ ছাড়াও কম্পিউটার এইডের কাজে রোবটিক্স-এর ব্যবহার রয়েছে।
মাইক্রোসার্কিটের উপাদান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষণ কাজ এবং ইলেকট্রনিক আইসি প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড ইত্যাদির তৈরির জন্য, চিকিৎসা ক্ষেত্রে সার্জারি, জীবাণুমুক্তকরণ ওষুষ বিতরণ, বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্তকরণ, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ, মিলিটারি অপারেশনে রোবট ব্যবহৃত হয়।
শারীরিকভাবে অসুস্থ, পঙ্গু বা অটিস্টিক শিক্ষার্থীদেরকে বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায়, শিশুদের চিত্রবিনোদনের ক্ষেত্রে খেলনা রোবট এবং মিডিয়া আর্ট ক্ষেত্রেও রোবট ব্যবহৃত হয়।
মহাকাশ কিংবা অন্য গ্রহ-উপগ্রহ সম্পর্কিত অনুসন্ধান ও বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য বা মহাকাশ যান প্রেরণ করার সময়, দৈনন্দিন কাজে, গৃহকর্মী হিসেবে নিত্যনৈমিত্তিক কার্যাদি সম্পাদনে
ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery)
ক্রায়োসার্জারি এক ধরনের কাটা ছেঁড়াবিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যধিক শীতল তাপমাত্রার গ্যাস মানব শরীরে প্রয়োগ করে অপ্রত্যাশিত ও অস্বাভাবিক রোগাক্রান্ত টিস্যু/ত্বক কোষ ধ্বংস করার কৌশল হলো ক্রায়োসার্জারি। মানব শরীরের ত্বক উপরিস্থ বিভিন্ন রোগ যেমন আচিঁল, ফুসকুড়ি, প্রদাহ, ক্ষতিকর ক্ষত ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে শরীরের অভ্যন্তরস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের রোগ যেমন ক্যান্সার, ক্ষত, প্রদাহ ইত্যাদিতে আক্রান্ত কোষগুলোর অবস্থান সিমুলেটেড সফট্ওয়্যার ধারা চিহ্নিত করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
আইসিটি যন্ত্রপাতি যেমন মাইক্রো ক্যামেরাযুক্ত নল প্রবেশ করিয়ে রোগাক্রান্ত কোষ/অংশের ক্ষতস্থান শনাক্ত করে অত্যন্ত সুখ সুচযুক্ত নলের (ক্রায়োপ্রোব) মাধ্যমে ক্রায়োনিক বিভিন্ন গ্যাস আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করা হয়। এখানে বিভিন্ন গ্যাসের তাপমাত্রা ক্ষেত্র বিশেষে -৪১ থেকে -১৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নামিয়ে আনা হয়। ফলে রোগাক্রান্ত টিস্যু/কোষে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখ থাকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ নিম্ন তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নামিয়ে আনা হয়।
ঐ নিম্নতম তাপমাত্রার রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব না হওয়ার রোগাক্রান্ত টিস্যু/কোষের ক্ষতিসাধন হয়।
ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসার রোগের আক্রান্ত স্থান ও রোগের ধরন অনুযায়ী এবং নির্দিষ্ট শীতলতার পৌঁছানোর জন্য তরল নাইট্রোজেন, আর্গন, অক্সিজেন, কার্বনডাই অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এই তরল গ্যাসগুলো ক্রায়োজনিক এজেন্ট নামে পরিচিত।
এ পদ্ধতিতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, ব্যথা, রক্তপাত অথবা অপারেশনজনিত কাটা-ছেঁড়ার কোনো জটিলতা নেই। রোগীকে কোনো পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয় না এবং অনেকক্ষেত্রে সার্জারি শেষে রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হয় না।
মহাকাশ অভিযান (Space Exploration)
মহাকাশচারীসহ কিংবা মহাকাশচারী ছাড়াই কোনো মহাকাশযান যখন পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির বাধঁন কাটিয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে একশত কিলোমিটার উপরে বায়ুমণ্ডলের বাইরে যায় আমরা সেটাকে মহাকাশ অভিযান বলে থাকি।
মহাকাশ অভিযানের কয়েকটি-
১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবরে মহাকাশে প্রথম উপগ্রহ স্পুটনিক উৎক্ষেপণ,
১৯৬১ সালের ২ এপ্রিল মানুষ, য়ুরি গ্যাগারিনের মহাকাশ অভিযান,
২০ জুলাই ১৯৬৯ প্রথম মানুষের চাঁদে অবতরন
২ ডিসেম্বর ১৯৭১ প্রথম মঙ্গল গ্রহে মার্স-৩-এর অবতরণ
১২ এপ্রিল ১৯৮১ প্রথম স্পেস শাটল উৎক্ষেপণ। এর ভেতর চাঁদে অবতরণ এবং স্পেস শাটলের উৎক্ষেপণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের।
মহাকাশ অভিমান করার জন্য একটি মহাকাশযানকে ঘন্টায় ৩০হাজার মাইল গতিবেগ অর্জন করতে হয়। যেটি শব্দের গতিবেগ থেকে আটগুণ বেশি।
মহাকাশ প্রযুক্তির বিকাশ হওয়ার পর অসংখ্য স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক ধরনের স্যাটেলাইটকে জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট বলে। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৬০০০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে মিল রেখে হুবহু একই গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, তাই জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটকে পৃথিবী থেকে আকাশে এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে বলে মনে হয়।
বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু-১ নামে যে সাটেলইটটি মহাকাশে স্থাপন করে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিকানা অর্জন করেছে, সেটি একটি জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট।
প্রতিনিয়ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করি। আমাদের স্মার্টফোনে যে জিপিএস (GPS: Global Positioning System) আছে, সেগুলো অসংখ্য স্যাটেলাইটের সিগনাল ব্যবহার করে কাজ করে।
যখন আমরা টেলিভিশনে কোনো অনুষ্ঠান দেখি সেগুলো অনেক সময় স্যাটেলাইট থেকে সম্প্রচার করা হয়। সমুদ্রে নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রুপান্তরিত হয়, আবহাওয়া স্যাটেলাইট তার নিখুঁত ছবি তুলে আমাদের সতর্ক করে দেয়।
হাবল টেলিস্কোপে তোলা গ্রহ-নক্ষত্রের ছবি বিজ্ঞানের জগতে নতুন দিগন্ধের সৃষ্টি করেছে।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে নিম্নলিখিত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে-
১. ডিশ সার্ভিস চালু হওয়ার মাধ্যমে টিভি চ্যানেলগুলোকে আর বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করতে হবে না।
২. এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশের কাছাকাছি অন্য অনেক দেশকে কভার করছে, কাজেই সেই দেশগুলোও বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে প্রয়োজনীয় সেবা কিনতে পারবে।
৩. দেশের ইন্টারনেট সুবিধা এলাকা যেমন— দুর্গম পার্বত্য ও হাওর অঞ্চলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন ব্যাংকিং, টেলিমেডিসিন, দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কার্যক্রমসহ নানাবিধ সেবা গ্রহণে সক্ষম হবেন।
- প্রকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সার্বিক যোগাযোগ চালু রাখা সম্ভব হবে।
৫. এছাড়াও এই স্যাটেলাইটে স্থাপিত অত্যাধুনিক ক্যামেরার মতো সুক্ষ্ম প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের অনেক মূল্যবান তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারবে।
১.৩.৫ আইসিটিনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা
ব্যবহারকারী বা ভোক্তাদের ব্যবহার্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও পরিবেশ তৈরি বা সরবরাহের পদ্ধতিকে বলে উৎপাদন।
Program Logic Controller (PLC) ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের যন্ত্র, পণ্যদ্রব্য ডিজাইনিং, ড্রাফটিং, সিম্যুলেশন করার জন্য বিশেষায়িত সফটওয়্যার,
যেমন- Computer Aided Design (CAD) মাধ্যমে নিখুঁতভাবে নকশা প্রণয়ন করা হয়।
জটিল ডাইস (Dice) কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের সাহায্যে নিখুঁতভাবে কাটা যায়।
বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানা কিংবা ওষুধ শিল্পে কম্পিউটারের সাহায্যে কাঁচামালের পরিমাণ, কিংবা চাপ ও তাপ নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত কর্মীবাহিনীর যাবতীয় তথ্যাদি যেমন— দক্ষতা, শ্রমঘণ্টা, পারিশ্রমিকসহ ব্যক্তিগত তথ্যাদি এবং পণ্য সংক্রান্ত সার্বিক তথ্য নির্ধারিত সফটওয়্যারে সংরক্ষণ করে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
একটি কারখানাকে পরিপূর্ণভাবে স্বয়ংক্রিয় করে সেটিকে চব্বিশ ঘন্টা কর্মক্ষম রাখা সম্ভব।
কৃষিক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শস্য উৎপাদন, মৎস্য চাষ, প্রাণিসম্পদ, বনজ সম্পদ, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ রক্ষণাবেক্ষণ কাজে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের প্রত্যয় অঞ্চল ও তৃনমূল পর্যায়ে কৃষক ও প্রান্তিক চাষিগণকে খুব সহজ, সরল ও আকর্ষণীয়ভাবে কৃষি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় অবহিতকরণ ও তথ্য সরবরাহের দ্বারা কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।
ঋতুভিত্তিক চাষাবাদ, বীজের ধরন, মাটির গুণাগুণ পরীক্ষণ, সার প্রয়োগের পরিমাপ, রোগ-বালাই প্রতিরোধ, কৃষিপণ্যের বাজারমূল্য ইত্যাদি সম্পর্কে সবধরনের তথ্য এর মাধ্যমে জানতে পারবেন। কৃষি গবেষনাগারে জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী নতুন নতুন খাদ্যশস্য ব্যাপক হারে উৎপাদনের বিষয়ের তাত্ত্বিক কার্যক্রম কিন্তু আইসিটির ব্যবহারেই সম্ভব হচ্ছে।
আমাদের দেশে কৃষি তথ্য সার্ভিস সংক্রান্ত সরকারি এবং বেসরকারি ওয়েবসাইট-এর মাধ্যমেও কৃষি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যসেবা পাওয়া যাবে।
সুগর মিলগুলোতে ই-পুর্জি চালু হওয়ার সুবাদে কৃষকগণ মোবাইল ফোন কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে তাঁর আখ সরবরাহের তথ্যাদি দ্রুত পেতে পারেন।
অন্যদিকে, প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির নানাভাবে প্রয়োগ ঘটছে। যার মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ সহজে শনাক্তকরণ, মালিকের নাম, লিঙ্গ, জন্ম তারিখ ইত্যাদি তথ্য সহজেই বের করা সম্ভব হচ্ছে।
১.৩.৬ প্রতিরক্ষা (Defence)
বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষার সাথেই প্রতিরক্ষা শিল্প খুবই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।
এটি একদিকে যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে এবং অন্যদিকে অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
এই শিল্পের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে ভিন্নমাত্রা পেয়েছে।
পৃথিবীর অনেক দেশ সরাসরি যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন করতে না পারলেও তাদের মানব সম্পদ ব্যবহার করে প্রতিরক্ষার সাথে সম্পর্কিত সফটওয়্যার প্রস্তুত এবং বিপণন করে দেশের অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা পালন করছে।
প্রতিরক্ষা এবং আইসিটি একে অপরের পরিপুরক হিসেবে কাজ করছে।
যেমন- একসময় বোমার কোনো নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ছিল না, তাকে যেখানে নিক্ষেপ করা হতো সেটি সেখানে আঘাত করত। এখন আইসিটির সহায়তায় স্মার্ট বোমা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যেটি নির্দেশ শুনে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আঘাত করতে পারে।
সাম্প্রতিক কালে মনুষ্যবিহীন এয়ারক্র্যাফট (Unmanned Aerial Vehicle-UVA) বা ড্রোন (Drone) ব্যবহার করে যুদ্ধের পরিস্থিতিই পাল্টে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
আকাশ থেকে মহাকাশকেন্দ্রিক এবং হার্ডওয়্যার থেকে সফটওয়ার বোত যুদ্ধ এখনকার যুদ্ধের নিত্যদিনের চিত্র।
প্রতিরক্ষা শিল্পে এসবের লক্ষণীয় প্রভাবগুলো নিম্নরূপ:
সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে সিমুলেশান এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পরিবেশ তৈরি করে ব্যাপকভাবে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হয়। এটি নিরাপদ, অর্থ সাশ্রয়ী এবং ২৪ ঘন্টা চালু রাখা সম্ভব।
মানুষকেন্দ্রিক যুদ্ধক্ষেত্র ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে আধুনিক যুদ্ধে নেটওয়ার্কভিত্তিক পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে কমান্ডার তার অফিসে অবস্থান করে যুদ্ধের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যুদ্ধ পরিচালনা তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।
স্যাটেলাইট যোগাযোগ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি সরাসরি সম্প্রচার পর্যবেক্ষণ ও কমান্ডিং করা সম্ভব হয়।
শত্রুবাহিনীকে পর্যুদস্ত করার জন্য তাদের কমান্ড সেন্টারের যোগাযোগ ব্যবস্থা ইলেক্ট্রনিক জ্যামিং করে অচল করে নিতে পারে
মিসাইল, রকেট বা ড্রোন আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পালটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী একত্রে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস বা বাংলাদেশ সশস্ত্র
বাহিনী নামে পরিচিত। এই বাহিনীর উপর আমাদের দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত আছে।
সমগ্র বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য মিলিটারি ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (MIST) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
১.৩.৭ বায়োমেট্রিক (Biometric)
মানুষের দৈহিক গঠন বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য পরিমাণের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করার পদ্ধতি বায়োমেট্রিক।
একজন মানুষের সাথে অন্য মানুষের আচরণ বা গাঠনিক বৈশিষ্ট্য কখনোই এক রকম হবে না।
বায়োমেট্রিক দুই প্রকার-
(ক) শরীরবৃত্তীয় (Physiological) বায়োমেট্রিক পদ্ধতি
আঙ্গুলের ছাপ শনাক্তকরণ (Fingerprint) : পৃথিবীতে প্রকৃতিগতভাবে প্রতিটি মানুষের আঙুলের ছাপ আরেকজনের আঙুলের ছাপের মিল নেই। একজনের টিপসই কখনোই অন্যজনের সাথে খাপ খাবে না।
হাতের রেখা শনাক্তকরণ (Hand geometry) : এ পদ্ধতিতে হাতের আকার, পুরুত্ব, হাতের রেখার বিন্যাস ও আঙুলের দৈর্ঘ্য বিশ্লেষণ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
আইরিশ শনাক্তকরণ (Irish scanning) : এ পদ্ধতিতে চোখের মণির চারপাশে বেষ্টিত রঙিন বলয় বা আইরিশ বিশ্লেষণ করে শনাক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হয়। শনাক্তকরণের জন্য সময়ও তুলনামূলকভাবে কম লাগে এবং সুক্ষ্মতাও গ্রহণযোগ্য মাত্রার হয়ে থাকে। তবে কন্টাক্ট লেন্স পরা থাকলে এ পদ্ধতি সবসময় কার্যকরী নাও হতে পারে।
মুখমণ্ডলের অবয়ব শনাক্তকরণ (Face recognition) : এই পদ্ধতিতে পুরো মুখমণ্ডলের ছবি তুলে শনাক্ত করা হয়। আগে থেকে রক্ষিত স্যাম্পল মানের সাথে যার মুখমণ্ডলের আকৃতি তুলনা করা হবে তার ছবি ক্যামেরার মাধ্যমে করে সেট তুলনা করা হয়।
ডিএনএ পর্যবেক্ষণ (DNA test) : (DNA- Deoxyribo Nucleic Acid) টেস্টের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তিকে অত্যন্ত নিখুঁত ও প্রশ্নাতীতভাবে শনাক্ত করা যায়। মানব শরীরের যে কোনো উপাদান যেমন— রক্তে, চুল, আঙুলের নখ, মুখের লালা হতে ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর এগুলোর গঠন- প্রকৃতি শনাক্তের দ্বারা ম্যাপ বা ফ্লু-প্রিন্ট বায়োলজিক্যাল ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালে নমুনা নিয়ে পূর্ববর্তী ডেটার সাথে মিলিয়ে কোনের ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করা যায়।
(খ) আচরণের (Behavioral) বায়োমেট্রিক পদ্ধতি
কিবোর্ডে টাইপিং গতি যাচাই (Typing keystroke verification) : কিবোর্ড কিংবা এ জাতীয় কোনো ইনপুট ডিভাইসে তার গোপনীয় কোড কত দ্রুত টাইপ করে দিতে পারে তার সময় পূর্বের সময়ের সাথে মিলিয়ে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
হাতে করা স্বাক্ষর যাচাইকরণ (Signature verification) : এটি একটি বহুল ব্যবহৃত ও দীর্ঘদিনের প্রচলিত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে স্বাক্ষরের আকার, ধরন, লেখার গতি, সময়, লেখার মাধ্যমের (যেমন- কলম, পেনসিল ইত্যাদি) চাপকে যাচাই করে শনাক্তকরণ করা হয়।
কন্ঠস্বর যাচাইকরণ (Voice recognition) : এই পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর কন্ঠস্বরকে মাইক্রোফোনের মাধ্যমে ধারণপূর্বক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর সাহায্যে ইলেকট্রিক সিগন্যালে রূপান্তর করে ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালে ভয়েস রেকর্ডারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কন্ঠস্বর রেকর্ড করা হয় এবং পূর্বের ধারণকৃত কন্ঠস্বরের সাথে তুলনা করে শনাক্তের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তির সর্দি, কাশি হলে শনাক্তকরণে বিঘ্নের সৃষ্টি হয়।
বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ
মৃতদেহ শনাক্তকরণ, অপরাধী শনাক্তকরণ, পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব শনাক্তকরণ, জাতীয় পরিচয়পত্র, বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার নিবন্ধন, এটিএম ও অনলাইন ব্যাংকিং, প্রবেশ নিরক্ষণ ও উপস্থিতি নির্ণয়, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন লাইন, ই-কমার্স ও স্মার্ট কার্ড ইত্যাদিতে বায়োমেট্রিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে।
১.৩.৮ বায়োইনফরমেটিক্স (Bioinformatics)
বায়োইনফরমেটিক্স জীববিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশান ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত এবং পরিসংখ্যানের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিষয়।
মূলত এই বিষয়টির জন্ম হয়েছে জীববিজ্ঞানের বিশাল পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করে সেগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য।
বায়োইনফরমেটিক্সের প্রথম বড় সাফল্য এসেছিল যখন ১০ বছরের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মানব জিনোম প্রথমবার সিকোয়েন্স করা হয়েছিল এবং সেই তথ্য অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছিল যেন সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা সেটি পেতে পারে। এখন প্রযুক্তির উদ্যানের কারণে কয়েক ঘণ্টার ভেতর পুরো মানব জিনোম সিকোয়েন্স করা সম্ভব।
বায়োইনফরমেটিক্সের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে ক্যান্সারের উপর গবেষণা। ভবিষ্যতে প্রত্যেকটা মানুষের জন্য আলাদা আলাদাভাবে তার নিজস্ব ওষুধ ব্যবহৃত হবে, সেটিও সম্ভব হবে বায়োইনফরমেটিক্সের গবেষণার ফলে।
প্রোটিনের গঠন বহুদিন থেকে বিজ্ঞানীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বায়োইনফরমেটিক্স এই ব্যাপারে মূল গবেষণায় এর ভূমিকা পালন করছে।
বিজ্ঞানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিবর্তন। এই বিবর্তনের রহস্য উন্মোচনে বায়োইনফরমেটিক্স অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করছে।
সাধারণত নিচের চারটি ভিন্ন ভিন্ন শাখার উপাদান ও কৌশলের সমন্বয়ে বায়োইনফরমেটিক্স পদ্ধতি কাজ করে থাকে।
১. আনবিক জীববিদ্যা ও মেডিসিন। ডেটা উৎস বিশ্লেষণের কাজ করে।
২. ডেটাবেজ নিরাপদ ডেটা সংরক্ষণ ও ডেটা ডিস্ট্রি (Retrive) করা
৩. প্রোগ্রাম: উপাত্ত বিশ্লেষণ অ্যালগরিদম যার মাধ্যমে বায়োইনফরমেটির কঠোরতা সুনির্দিষ্ট করা হয়।
- গণিত ও পরিসংখ্যান : এর সাহায্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়।
বায়োইনফরমেটিক্সের ব্যবহার
মূলত জৈবিক পদ্ধতি বিশ্লেষণ সম্পর্কে সম্যক এবং সঠিক ধারণা অর্জন করার ক্ষেত্রে বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহৃত হয়। আর এই জৈনিক তথ্য হিসাব-নিকাশ এবং এ সম্পর্কিত সমস্যার সমাধানে কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য।
তবে জিনোম সিকোয়েন্স, প্রোটিন সিকোয়েন্স ইত্যাদি গঠন উপাদানের ইলেকট্রনিক ডেটাবেজ গঠনে কম্পিউটার প্রযুক্তি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।
এ ছাড়াও মলিকুলার মেডিসিন, জিনথেরাপি, ওষুধ তৈরিতে, বর্জ্য পরিষ্কারকরণে, জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণার বিকল্প শক্তি উৎস সন্ধানে, জীবাণু অস্ত্র তৈরিতে, ডিএনএ ম্যাপিং ও অ্যানালাইসিস, জিন ফাইন্ডিং, প্রোটিনের মিথস্ক্রিয়া পর্যবেক্ষণে বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহৃত হয়।
১.৩.১ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering)
প্রতিটি জীবদেহ অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষ দিয়ে গঠিত।
প্রত্যেকটি কোষের মাঝে থাকে ক্রোমোজোম (Chromosome) যেগুলো তৈরি হয় (DNA: Deoxyribo Nucleic Acid) ডাবল হেলিক্স দিয়ে।
ডিএনএ এর ভিতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ সেই প্রাণীর জীবনের বৈশিষ্ট্যকে বহন করে এবং সেগুলো (Gene) হিসেবে পরিচিত।
ক্রোমোজোমে অসংখ্য জিন থাকতে পারে। মানবদেহে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার জিন রয়েছে। এ ধরনের এক সেট জিনকে জিনোম বলে।
জিনোম হলো জীবের বৈশিষ্ট্যের নকশা বা বিন্যাস।
জিনোম যত দীর্ঘ হবে, তার ধারণ করা তথ্যও তত বেশি হবে। জিনোমের উপর নির্ভর করে ঐ প্রাণি বা উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য কীরূপ হবে।
যেহেতু একটি জিন হচ্ছে একটি প্রাণীর বৈশিষ্ট্যের বাহক, তাই কোনো প্রাণীর জিনোমের কোনো একটি জিনকে পরিবর্তন করে সেই প্রাণীর কোনো একটি বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা সম্ভব।
যেহেতু জিনগুলো আসলে ডিএনএ’র একটি অংশ, তাই একটা জিনকে পরিবর্তন করতে হলে ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ’র সেই অংশটুকু কেটে আলাদা করে অন্য কোনো প্রাণী বা ব্যাকটেরিয়া থেকে আরেকটি জিন কেটে এনে সেখানে লাগিয়ে দিতে হয়।
গবেষণার মাধ্যমে যখন একটি জিন পরিবর্তন করে সেখানে অন্য জিন লাগানো হয় তাকে বলা হয় রিকম্বিনেট বা RDNA. এসব RDNA সমৃদ্ধ জীবকোষকে বলা হয় Genetically Modified Organism (GMO).
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সংজ্ঞা হিসেবে আমরা বলতে পারি, জীবদেহে জিনোমকে প্রয়োজন অনুযায়ী সাজিয়ে কিংবা একাধিক জীবের জিনোমকে জোড়া লাগিয়ে নতুন জীবকোষ সৃষ্টির কৌশলই হচ্ছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।
উচ্চফলনশীল জাতের ধান ও অন্যান্য ফসল এবং প্রাণীর জিনের সাথে সাধারণ জিন জোড়া লাগিয়ে নতুন ধরনের আরো উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড জাতের শস্য, প্রাণী ও মৎস্য সম্পদ উৎপাদিত হয়েছে। এটিই সহজ ভাষায়, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তা
বিশ্বের অনেক দেশেরই জনসংখ্যার তুলনায় খাদ্য ঘাটতি একটি সাধারণ সমস্যা, যার জন্য খাদ্য আমদানি করতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। এই সমস্যা সমাধানে বর্তমানে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রয়োগ করে বহুগুণে খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এই বিষয়টি হাইব্রিড নামে বহুল পরিচিত।
প্রাণীর আকার এবং মাংসবৃদ্ধি, দুধে আমিষের পরিমাণ বাড়ানো এইধরনের কাজ করেও খাদ্য সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কৌশলগতভাবে পরিবর্তিত E.Coli ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্ট হতে মানবদেহের ইনসুলিন তৈরি, হরমোন বৃদ্ধি, এবং বামনত্ব, ভাইরাসজনিত রোগ, ক্যান্সার, এইডস ইত্যাদির চিকিৎসায় জিন প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে জিন স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য অল্প সময়ে সুচারুরূপে স্থানান্তর করা সম্ভব হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট উদ্ভাবক বা উদ্যোক্তাগণের নিকট প্রচলিত প্রজননের তুলনায় এ প্রযুক্তিটি অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে।
আমাদের দেশেও এ প্রযুক্তির উপর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, আখ গবেষণা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি বেশ কিছু সংস্থা কাজ করে অনেক উচ্চফলনশীল জাতের শস্যবীজ উৎপাদন করেছে।
এসব বীজ ব্যবহার করে শস্যও কয়েকগুণ বেশি হারে উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চ ফলনশীল ব্রি (BRRI) জাতের বহু ত্যারাইটি ধানের বীজ উদ্ভাবন করেছে। এই ইনস্টিটিউটে উদ্ভাবিত পার্পল কালার (বেগুনি রঙের)-এর উফশি ধান দেশ-বিদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথিতযশা বিজ্ঞানী জনাব মাসুদুল আলমের নেতৃত্বে একদল গবেষক পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার আমাদের দেশের সোনালি আঁশকে বিশ্ব দরবারে হারানো ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।
এ ছাড়াও ভুট্টা, ধান, তুলা, টমেটো, পেঁপেসহ অসংখ্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, রোগ প্ৰতিরোধক ক্ষমতা বাড়ানো, আগাছা সহিষ্ণু করা, পোকামাকড় প্রতিরোধী করা এবং বিভিন্ন জাতের মৎস্য সম্পদ (বিশেষত মাগুর, কার্প, তেলাপিয়া ইত্যাদি) বৃদ্ধির জন্য জিন প্রকৌশলকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাত্রা পাশাপাশি এর কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তার মাঝে উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে, জীববৈচিত্রা অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে জীবজগতে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি, অনৈতিক বা অযাচিতভাবে জিনের স্থানন্তর, মানবদেহে প্রয়োগযোগ্য এন্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস ও অ্যালার্জির উদ্ভব কিংবা ভয়াবহ ও প্রাপ্ত বাভাইরাস উন্ননের আশঙ্খা ইত্যাদি।
১.৩.১০ ন্যানোটেকনোলজি (Nanotechnology)
10 মিটারকে ন্যানোমিটার বলে এবং বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে 1 থেকে 100 ন্যানোমিটার আকৃতির কোনো কিছু তৈরি করা এবং ব্যবহার করাকে ন্যানোটেকনোলজি বলে।
এই আকৃতির কোনো কিছু তৈরি করা হলে তাকে সাধারণভাবে নানো পার্টিকেল বলে। ক্ষুদ্র আকৃতির জন্য নানো পার্টিকেলের পৃষ্ঠদেশের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি; সেজন্য রাসায়নিকভাবে অনেক বেশি, ক্রিয়াশীল হয়ে থকে। শুধু তাই নয়, একটি দ্রবের বড় আকৃতিতে যে ধর্ম বা গুণাগুণ থাকে, ন্যানো পার্টিকেল হলে তার ভেতর কোয়ান্টাম পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাব দেখা যেতে শুরু করে বলে সেই ধর্ম বা গুণাগুণ পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। অনেক কাঠিন্য ন্যানো আকৃতিতে সাধারণ অবস্থা থেকে সাত গুণ বেশি হতে পারে।
রসায়নবিদেরা অনেকদিন থেকে ন্যানো ব্যাসার্ধের পলিমার তৈরি করে আসছেন এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের চিপস তৈরি করার সময় প্রযুক্তিবিদেরা সেখানে ন্যানো আকৃতি ডিজাইন করে আসছেন, কিন্তু শুধু সাম্প্রতিক সময়ে ন্যানো পার্টিকেল তৈরি এবং ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় টুল তৈরি হয়েছে এবং ন্যানো পার্টিকেলের জগৎ সত্যিকার অর্থে উন্মুক্ত হয়েছে।
এ প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বৃহৎ স্কেলে পণ্য উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এবং উৎপাদিত পণ্য আকারে সুক্ষ্ন হলেও অত্যন্ত মজবুত, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, টেকসই ও হালকা হয়।
‘আগামী বিশ্ব হবে ন্যানোটেকনোলজির বিশ্ব’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে স্মার্ট ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সার ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্তি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ন্যানো রোবট, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, কার্যকরী ও সস্তায় শক্তি উৎপাদনসহ পানি ও বায়ু দুষণ কমানো সম্ভব হবে মর্মে গবেষকগণ আমাদের আশার বাণী শুনিয়েছেন।
ন্যানো প্রযুক্তি দুটি পদ্ধতিতে হয়:
(ক) ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ (Bottom Up): এই পদ্ধতিতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আনবিক উপাদান থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় কোনো জিনিস তৈরি করা হয়।
(গ) বৃহৎ থেকে ক্ষুদ্র (Top Down) : এই পদ্ধতিকে একটু বড় আকৃতির কিছু থেকে শুরু করে তাকে থেকে ছোট করতে করতে কোনো বস্তুতে ক্ষুদ্রাকৃতির আকৃতিতে পরিণত করা হয়।
ন্যানোপ্রযুক্তির ব্যবহার
১. কম্পিউটারের প্রসেসরের উচ্চ গতি, দীর্ঘস্থায়িত্ব, কম শক্তি খরচ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যে ব্যবহার্য। একই সঙ্গে ডিসপ্লে ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করে।
২. চিকিৎসা ক্ষেত্রে ন্যানো রোবট ব্যবহার করে অপরেশন করা, যেমন- এনজিওপ্লাস্টি সরাসরি রোগাক্রান্ত সেলে চিকিৎসা প্রদান কর, যেমন- ন্যানো ক্রায়োসার্জারি, ডায়াগনোসিস করা, যেমন- এন্ডোসকপি, এনজিওগ্রাম, কলোনোস্কোপি ইত্যাদি।
৩. খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেটিং, খাদ্যে স্বাদ তৈরিতে, খাদ্যের গুণাগুণ রক্ষার্থে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের দ্রবাদি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।
৪. জ্বালানি উৎসের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ফুয়েল তৈরির কাজে, যেমন- হাইড্রোজেন আয়ন থেকে ফুয়েল, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সৌরকোষ তৈরির কাজে।
৫. যোগাযোগ ক্ষেত্রে হালকা ওজনের ও কম জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন গাড়ি প্রস্তুতকরণে।
৬. খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সামগ্রী যেমন-ক্রিকেট, টেনিস বলের স্হায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য, ফুটবল বা গলফ বলের বাতাসের ভারসাম্য রক্ষার্থে।
৭. বায়ু ও পানি দূষণ রোধে শিল্প কারখানার ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্যকে ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করে অক্ষতিকর বস্তুতে রূপান্তর করে পানিতে নিষ্কাশিত করা; যেমন- ট্যানারি শিল্পের বর্জ্যকে এই প্রযুক্তির সাহায্যে দূষণমুক্ত করে নদীর পানির দূষণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তেমনিভাবে গাড়ি ও শিল্পকারখানার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া ন্যানো পার্টিকেলের সহায়তায় দূষণমুক্ত গ্যাসে পরিণত করে বায়ু দূষণ রোধ করা যায়।
৮. প্রসাধন শিল্পে : প্রসাধনীতে জিংক অক্সাইড-এর ন্যানো পার্টিকেল যুক্ত হওয়ায় ত্বকের ক্যান্সাররোধ সম্ভব হয়েছে। সেই সাথে সানস্ক্রিন ও ময়েশ্চারাইজার তৈরির কাজে ব্যবহার্য রাসায়নিক পদার্থ তৈরির ক্ষেত্রে এবং এন্টি-এজিং ক্রিম তৈরিতেও ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।
তবে উল্লেখ্য যে ন্যানো পার্টিকেলের ব্যবহারে নানাবিধ সুবিধা থাকলেও অন্যদিকে ন্যানো পার্টিকেল দিয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র তৈরি, প্রচলিত জ্বালানি গ্যাস-তৈল ইত্যাদির বিকল্প হিসেবে এর অপব্যবহার, অভিজাত শ্রেণির উদ্ভবের দরুন ধনী ও গরিবের পার্থক্য চরম মাত্রায় বৃদ্ধি, কালোবাজারি এবং সর্বোপরি মানব শরীরের কোষের গঠনশৈলী পরিবর্তনসহ কোষ মেরে ফেলার মতো ক্ষতিকারক প্রযুক্তি হিসেবে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার এখনো প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান হতে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
১.৪ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে নৈতিকতা (Ethics of ICT usages)
নৈতিকতা হচ্ছে এক ধরনের মানদন্ড যা আচরণ, কাজ এবং পছন্দের ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
এটি ঔচিত্য ও অনুচিত্যের মাপকাঠিও ঘটে, কেননা মানবধর্ম এবং নৈতিকতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অনৈতিক ও বেতাইনি এক বিষয় নয়। অনেক অনৈতিক কাজ আইন বিরুদ্ধ নয়, কিন্তু সকল আইন বিরুদ্ধ কাজ অবশ্যই অনৈতিক।
সামনাসামনি কাউকে গালাগাল করে একজন পার পেয়ে যেতে পারে, কিন্তু ফেসবুকে কাউকে গালাগাল করে একজন জেলে চলে যেতে পারে।
যেহেতু পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষ কোনো না কোনোভাবে তথ্য প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত তাই এর ব্যবহারের নৈতিকতার বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে নেওয়া উচিত।
কম্পিউটার ইথিক্স ইনস্টিটিউট ১৯৯২ সালে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিষয়ে দশটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলো-
১. তুমি কম্পিউটার ব্যবহার করে অন্যের ক্ষতি করবে না।
২. তুমি অন্যের কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।
৩. তুমি অন্য কারও ফাইলে নাক গলাবে না।
৪. তুমি চুরির উদ্দেশ্যে কম্পিউটার ব্যবহার করবে না।
৫. তুমি মিথ্যা তথ্যের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করবে না।
৬. তুমি লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহার ও কপি করবে না।
৭. তুমি বিনা অনুমতিতে কম্পিউটার সংক্রান্ত অন্যের রিসোর্স ব্যবহার করবে না।
৮. তুমি অন্যের কাজকে নিজের কাজ বলে চালিয়ে দেবে না।
৯. তুমি তথ্য প্ৰযুক্তির ব্যবহারের আগে সমাজের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে চিন্তা করবে।
১০. তুমি কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় অন্যের ভালোমন্দ বিবেচনা করবে এবং শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন করবে।
আজকাল ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক ধরনের অনৈতিক এবং অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হয়। এর ভেতর বহুল প্রচলিতগুলো হচ্ছে :
হ্যাকিং (Hacking) : কোনো কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, ডেটার উপর অননুমোদিতভাবে অধিকার (Access) লাভ করার উপায়কে হ্যাকিং বলে। এতে ব্যক্তির অক্ষের বা সিস্টেমের ক্ষতিসাধন করা হয় এবং অনেকক্ষেত্রে কোনো ক্ষতি না করে শুধু নিরাপত্তা ত্রুটি সম্পর্কে কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে জানান দেয়া হয়। যে সব ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ এ ধরনের কর্মে অপকর্মের সাথে জড়িত থাকে তাদের হ্যাকার বলে।
ফিশিং (Phishing) : ফিশিং করার অর্থ ই-মেইল বা মেসেজের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীকে নকল বা ফেইক ওয়েবসাইটে নিয়ে কৌশলে তার বিশ্বস্ততা অর্জন করা এবং তারপর ব্যবহারকারীর অ্যাকসেস কোড, পিন নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, পাসওয়ার্ড, ব্যাংক একাউন্ট নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে তাদের নানা ধরনের বিপদে ফেলা।
স্প্যামিং (Spaming) : অনাকাঙ্ক্ষিত বা অবাঞ্ছিত ই-মেইল কিংবা মেসেজ পাঠানোকে স্প্যামিং বলে। এই কাজ যারা করে তাদেরকে স্প্যামার বলা হয়। যখন কোনো ব্যবহারকারী কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করেন বা কোনো গ্রুপের মেসেজ বোর্ডে প্রবেশ করেন তখন স্প্যামাররা সেখান থেকে ই-মেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করে ব্যবহারকারীর ই-মেইলে বিভিন্ন প্রতারণামূলক মেসেজ পাঠায়।
সফটওয়্যার পাইরেসি (Software piracy) : সফটওয়্যার একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রযুক্তি পণ্য, যা প্রোগ্রামারগণ পেশাগত দক্ষতা, মেধা আর মননের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে তৈরি করে থাকেন এবং এগুলোর তাঁরাই স্বত্বাধিকারী হন। লাইসেন্সবিহীনভাবে বা স্বত্বাধিকারীর অনুমোদন ব্যতিরেকে এ ধরনের সফটওয়্যার কপি করা, নিজের নামে কিংবা কোনো প্রকার পরিবর্তন-পরিবর্তন করে ব্যবহারের সুযোগ নেয়া পাইরেসির আওতায় পড়ে। Business Software Alliance (BSA)-র সূত্রমতে ব্যবহৃত সকল সফটওয়্যারের প্রায় ৩৬ ভাগই পাইরেটেড সফটওয়্যার। কপিরাইট আইন দ্বারা উন্নত দেশগুলোর এই ধরনের অপরাধ প্রতিহত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
প্লেজিয়ারিজম (Plagiarism) : কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো লেখা, সাহিত্যকর্ম, গবেষণাপত্র, সম্পাদনা কর্ম ইত্যাদি হুবহু নকল বা আংশিক পরিবর্তন করে নিজের নামে প্রকাশ করাই হলো প্লেজিয়ারিজম। সঠিক সূত্র উল্লেখ ছাড়া কোনো কিছু রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহারও বেআইনি কাজ তথা প্রেজিয়ারিজমের আওতায় পড়ে।
সাইবার আইন : সাইবার অপরাধ দমনে বিভিন্ন দেশেই আইন চালু আছে। আমাদের দেশে প্রণীত “তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬’-এর ৫৭(১) ধারা মতে, “যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে যা মিথ্যা ও অম্লীল, যার দ্বারা কারও মানহানি ঘটে বা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, আর এ ধরনের তথ্যগুলোর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হলে অনধিক দশ বছর কারাদন্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে’।
এছাড়া, পর্ণগ্রাফি আইন-২০১২-তে বর্ণিত আছে, ‘কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্ণগ্রাফি সরবরাহ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দন্ডিত হবেন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে আমাদের দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়, যার আংশিক উল্লেখ করা হলো :
- কোনো ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোয় বেআইনি প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন, বিনষ্ট বা অকার্যকরের চেষ্টা কিংবা কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা প্রোগ্রাম ধ্বংস পরিবর্তন বা অকার্যকর করতে পারবেন না।
- ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে পারবেন না, সেখান থেকে কোনো তথ্য বা উদ্ধৃতাংশ বা উপাত্তের অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারবেন না।
- ডিজিটাল ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে কারো সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতাশা, জালিয়াতি বা ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারবেন না।
ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে প্রচার বা অপপ্রচার কিংবা এতে মদদ দিতে পারবেন না।
- রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, সার্বভৗমত্ব ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য অপপ্রচার বা কার্যকলাপ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা জাতিগত ঘৃণ-উদ্ধানি বা বিভেদ/বিদ্বেষ সৃষ্টি করে কিংবা সামাজিকভাবে বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয় এরূপ কোনো কার্যক্রম ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে করা যাবে না।
- ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নষ্ট, অপমান বা অপদস্থ করা কিংবা ভয়ভীতি বা হুমকি প্রদর্শন করা যাবে না।
- ইলেকট্রনিক ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারি, আধা-সরকারি কিংবা অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য চুরি, তথ্য পাচার করা যাবে না।
ডিজিটাল আইনের আততায় উল্লিখিত কৃত অপরাধের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের শান্তি এবং আর্থিক দণ্ড প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে।
তাই আমাদের জীবনের অন্যান্য প্রতিটি সেক্টরের ন্যায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিবেক, বুদ্ধি ও বিবেচনাকে নৈতিকতার মানদন্ড হিসেবে ব্যবহার করে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সবধরনের অপরাধমূলক কাজের প্রবণতা হতে পরিত্রাণ পেতে পারি।
ভিন্ন ধরনের অপরাধ
অ্যান্টিয়ান্ট : প্রযুক্তি মোড়লদের বিরুদ্ধে শুনানি
আমরা যখন কথা বলি তখন সবসময়ই ব্যক্তি অপরাধ কিংবা ছোটখাটো অপরাধী সংগঠনের অপরাধ নিয়ে কথা বলি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে সারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো অনেক অপরাধ করে শুধু দোষী সাব্যস্ত হয়নি, তার জন্য শাস্তি ভোগ করেছে।
ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ক্যামব্রিজ এনালিটিকাকে রোজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে দিয়ে অনেক বড় অপরাধ করেছিল।
হোয়াটঅ্যাপ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে তাদেরকে ১১০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল।
কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য ২০১৬ সালে অ্যাপেল কোম্পানিকে আয়ারল্যান্ডকে ১৪.৫ বিলিয়ন ইউরো ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পৃথিবীর মানুষের সচেতন না হলে পুরো পৃথিবী একসময় কয়েকটি দৈত্যাকৃতির সফটওয়ার কোম্পানির হাতে নিবন্ধিত হবে। সেটি যেন না হতে পারে সেজন্য সবার সচেতন থাকার প্রয়োজন আছে।
১.৫ সমাজ জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব (Impact of ICT In Social Life)
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। পৃথিবীর মানুষ তথ্য প্রযুক্তির সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এখন একটি দিনও অতিবাহিত করতে পারে না।
যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃষি, প্রকাশনা, শিল্প-সংস্কৃতি ইত্যাদি সমাজের সর্বক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বহুমুখী প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়ে আসছে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির সফল দ্বারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন ফি পরিশোধ, ভর্তি, ফলাফল তৈরি ও প্রকাশ, রেজিস্ট্রেশন বা পরীক্ষার ফরম পূরণ, বিভিন্ন ফলাফল বিশ্লেষণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঠিক ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি কাজে অত্যন্ত সহজ, দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া, দেশে অবস্থান করেও শিক্ষার্থীগণ বিশ্বসেরা বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পড়াশোনা ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণেই।
বিজ্ঞান ও চিকিৎসাক্ষেত্রে আমরা জানি, বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতির ধারায় তথ্য প্রযুক্তি বর্তমান উৎকর্ষতায় উন্নীত হয়েছে। ঠিক একইভাবে, তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমেই কিছু বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক অগ্রগতিকে বহুগুণে ত্বরান্বিত করে চলেছে। অন্যান্য সেক্টর তো রয়েছেই, শুধু চিকিৎসাক্ষেত্র পর্যালোচনা করলে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের সুফল বলে শেষ করা যাবে না। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ও নিখুঁতভাবে রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবা দেয়া, ঘরে বসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ ও সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি জানা, সর্বশেষ আবিষ্কৃত ওষুধ সংগ্রহ ও ব্যবহারে সক্ষমতা এনে দিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যাংকে অর্থ জমা, উত্তোলন, ক্লিয়ারিং হাউস বা আন্তঃব্যাংক লেনদেন, রেমিট্যান্স আদান-প্রদান, স্মার্ট কার্ড ব্যবহারে এটিএম বুথের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিল গ্রহণ, দীর্ঘ বা মেয়াদি ঋণ অনুমোদন, ঋণের অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ, সুদের হার নির্ণয়, মেয়াদ নির্ধারণ, শেয়ার কেনা-বেচা ইত্যাদি বহুবিধ কার্যক্রম তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে আজকাল অতি সহজেই সম্পন্ন করা যাচ্ছে। মোট কথা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহকসেবার স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা প্রশ্নাতীত।
অফিস-আদালতে আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রায় সবধরনের প্রতিষ্ঠানের অফিস ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা, সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ একটি অনিবার্য বিষয়। প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি, কর্মী ব্যবস্থাপনা, টেন্ডার সংক্রান্ত কার্যক্রম, কমিশন, বেতন-ভাতা নির্ধারণ থেকে শুরু করে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ-বিতরণে টেলিফোন, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ইন্টারনেট প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার হয়ে আসছে। তাছাড়া, বিচারিক কার্যক্রমে একজন প্রার্থী অনলাইনে মামলা দায়েরসহ সাক্ষ্যপ্রমাণাদি সেখানে উপস্থাপন করতে পরছেন, যার ফলে বিচার প্রক্রিয়াতেও গতিশীলতা বেড়েছে অনেকাংশে।
শিল্প ক্ষেত্রে: বিশ্ববাজার অনুসন্ধানের মাধ্যমে কলকারখানার কাঁচামাল সংগ্রহ, পণের ডিজাইন, উৎপাদন ও মাননিয়ন্ত্রণে উন্নত যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও ব্যবহার, ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিবেশে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, রোবটের ব্যবহার, জীবাণুমুক্ত খাদ্যপণ্য তৈরির ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা নিরুপন, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, বাজার ব্যবস্থাপনা, উৎপাদিত পণ্য ক্রেতা সাধারণের কাছে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন, অনলাইনে অর্ডার গ্রহণ, পণ্য সরবরাহ, বিশ্ববাজার অর্থনীতির সাথে ভারসাম্য রক্ষা, বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতায় প্রবেশ, প্রাধান্য বিস্তার ইত্যাদি শিল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিটি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
কৃষি ক্ষেত্রে- কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশের কৃষি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ নতুন দিগন্তের সুচনা করেছে বহু পূর্বেই। মাটির গুণগতমান, স্থানীয় আবহাওয়ার ধরণ, শস্যবীজ প্রাপ্তি, দেশি বা বিশ্ববাজারে চাহিদানুযারী সকল তথ্য জেনে লাভজনক শস্য নির্বাচন সম্ভব তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে।
বীজ বপনের সময় নির্ধারণ, জমির উর্বরতা বৃদ্ধির কৌশল, জমি তৈরির প্রক্রিয়া, পোকামাকড় আক্রমনের ধরন, পোকার প্রকৃতি নির্ণয় ও নিধন, রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা, ইত্যাদি কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে সম্ভব হচ্ছে।
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় : আজকাল তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা কল্পনাও করা যায় না। ব্যক্তিগত তথ্য যোগাযোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পণপরিবহন পর্যন্ত সর্বস্তরের যোগাযোগ ব্যবস্থার তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ই-কমার্স টেলিকমিউনিকেশন, ওয়্যারলেস যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।
শিল্প সংস্কৃতি ও বিনোদনের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে সারা বিশ্বে শিল্প-সংস্কৃতি বিনোদনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। অবাধ তথ্য প্রবাহের কারণে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও বিনোদনের নব নব মাত্রা সংযুক্তি মানব জীবনকে আয়েশি করে তুলেছে। সেই সাথে যুগোপযোগী ভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হয়ে ভবনুযায়ী দেশীয় সংস্কৃতির মূলধারার পাশাপাশি এর মানোন্নয়নও ঘটানো সম্ভব হচ্ছে।
১.৫.২ তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক
আসক্তি: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নিদ্রাহীন অবধি ব্যবহারের ফলে পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্ৰীয় পর্যায়ে নেতিবাচক অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারের তীব্র আসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব আশঙ্কামাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে।
গেমসের জন্য নিজের সন্তান বিক্রির মতো চরম অনৈতিক ঘটনা সংঘটনের খবর পাওয়া গেছে। অনলাইন গেমসে আসক্ত হয়ে ব্যবহারকারীদের মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার মতো ঘটনাও বিভিন্ন দেশে ঘটেছে। রাশিয়ান নাগরিকের সৃষ্ট গেমসের মাধ্যমে অনেক ছেলেমেয়ে আত্মহত্যা বা অকাল মৃত্যুর খবর আমরা সবাই অবগত আছি।
অপরাধ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র আসক্তির কারণে কোমলমতি শিশু-কিশোরসহ সমাজের এক বৃহদংশ বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। মতলববাজ হ্যাকাররা নানা কৌশলে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য চুরি পাচার, সাইবার হামলা, নেতিবাচক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দিয়ে সমাজে অস্থিতিশীল পরিবেশের জন্ম দিতে পারে।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা : তথ্য ও যোগাযোগ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি বিশেষত কম্পিউটারের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে চোখের উপর চাপ পড়ে, মাথা ব্যথা, হাত ব্যথা, ঘাড় ও পিঠের সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা যায় অনেককেই। রাত জেগে মোবাইল ফোন ব্যবহার, কম্পিউটার বা ইন্টারনেটে সময় কাটানোর কারণে স্নায়বিক ও মস্তিষ্কের নানাবিধ অসুস্থতাও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
পরিশেষে বলা যায়, চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত সার্জারির চাকুর ব্যবহার যথাযথভাবে না করে খুন-খারাবির কাজের অপব্যবহার রোধ করার দায়িত্ব সার্জারি চাকুর নয়, এই দায়িত্ব আমাদের সবার। একইভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে মানব সভ্যতাকে আরো অনন্যমাত্রায় অধিষ্ঠিত করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেই হবে।
১.৬ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন (ICT & Economical Development)
অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে একটি দেশের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নকেই বোঝায়। উন্নত জীবনযাত্রা মানে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, সাধারণ মানুষের আয়ের স্তর বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত হওয়া, নিরাপদ জীবন ব্যবস্থা থাকা এবং সবার উপর নাগরিকনের মৌলিক চাহিদাগুলো অনায়াসে পূরণ হওয়াকে বোঝায়। তথ্য প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতিতে নাগরিক জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উজানের ছোঁয়ায় মানুষের জীবন আরো বেগবান, সহজ, নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়েছে। সেইসাথে অবাধ তথ্য প্রবাহের জন্য পুরো পৃথিবীকেই একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করে দিয়েছে।
আজকের বিশ্বে কম্পিউটার, সাবমেরিন কেবল এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সকল উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর নিজেদের মতো করে তথ্য প্রবাহের মহাসড়কে প্রবেশ করে চলেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, এদের সমৃদ্ধির পেছনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। এই খাতে প্রচুর বিনিয়োগে বেড়েছে মূলধন এবং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে বহুগুণে। ইউরোপীয় এবং উন্নত দেশগুলোর (GDP Gross Domestic Product) ভিন্ন কারণ হিসেবে অর্থনীতির টেলিকমিউনিকেশন খাতের উন্নয়নকে চিহ্নিত করে থাকলেও সিংগাপুর, কোরিয়ার মতো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নকেই চিহ্নিত করেছেন।
শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও বেকারত্ব দূরীকরণের ক্ষেত্রে সমঅধিকার নিশ্চিতকরণ।
- সহজ পদ্ধতিতে তথ্য প্রাপ্তির ব্যবস্থাকরণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সক্ষমতা সৃষ্টি।
- মানসম্মত কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম দামের আইসিটি দ্রব্যের সহজলভ্যতা।
দেশের সর্বস্তরে ই-গভর্নেন্সের (ইলেকট্রনিক গভর্নেন্স) চালুর মাধ্যমে সরকারি আমলাতন্ত্র হ্রাস।
- প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বৃহৎ বাজার-সুবিধা প্রদান এবং স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে যোগাযোগ এবং সহযোগিতার মনোভাব তৈরি।
জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি : আইসিটির উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে জন্ম নিচ্ছে নতুনতর অর্থনীতি, মান নাম জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বা নলেজ ইকোনমি। আনভিত্তিক অর্থনীতি বিকাশের সাথে সাথে আমেরিকা, ইউরোপ কিংবা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরণের। যার ফলে উন্নয়নশীল দেশসমূহ আইসিটি এনাবন্ধ সার্ভিসগুলোকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নয়, এর ফলে বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
বাংলাদেশের অর্থনীতি পৃথিবীর দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি। বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য দেশের তুলনায় World Economic Forum-এর উন্নয়ন সূচকে আমরা ৩৪ তম অবস্থানে রয়েছি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই অবস্থান ২৪ তম হবে মর্মে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে উন্নয়নের সূচকে পৃথিবীর ‘পরবর্তী এগারোটি দেশের একটি দেশ বিচেনা করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দুইভাবে অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
প্রথমটি হলো সরাসরি সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।
আর দ্বিতীয়টি হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে।
এদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দেশীয় মোট উৎপাদনের ৮% ভাগ প্রবৃদ্ধি আইসিটি খাতের অবদান বলে অনুমান করা হয়। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট-এর মতে বিশ্বের মধ্যে অনলাইন কর্মীর সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি : ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ৮০০ (আটশত) রেজিস্টার্ড সফটওয়্যার কোম্পানি রয়েছে, অনুমান করা হয় এর পাশাপাশি অনিবন্ধিত আরো অনেক সফটওয়্যার কোম্পানি দেশে কাজ করছে। সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোতে ৩০ হাজার থেকে বেশি পেশাজীবী কাজ করছেন এবং এর মোট রাজস্বের পরিমাণ ২৫০ মিলিয়ন ডলার।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশে বাংকিং খাতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। দেশে বিদেশে টাকা পাঠানো অনেক সহজ হয়েছে। ইন্টারনেট দিয়ে নানা ধরনের বিল প্রদান করা যায়, এমনকি আয়কর পরিশোধ করা যায়। ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় দেশে টেলিমেডিসিন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা শুরু হয়।
আমাদের দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য একসেস টু ইনফরমেশন (a2i) প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় তথ্য অফিসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চালু হয়েছে। এতে করে তৃণমূল পর্যায়ের প্রশাসনিক ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সরকারি সবধরনের পরিষেবার তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, সাব-পোস্ট অফিসে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু করে সরকারি সবধরনের ডিজিটাল সার্ভিস সেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
কৃষি সেবা : বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অংশটি কৃষিখাত থেকে আসে কাজেই কৃষি ব্যবস্থার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার অর্থনীতির উজানে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যমে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের ফসল, কৃষিপদ্ধতি, বাজারজাতকরণ সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য দেওয়া হয়। দেশের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কৃষকদের নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ এই ধরনের উদ্যোগে সুফল পেতে শুরু করেছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে গেছে।
শিল্প ও উৎপাদন : বাংলাদেশের প্রধান শিল্প গার্মেন্টস যেখানে ২০১৮ সালে ৩৬.৬৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বাণিজ্য হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করে সমগ্র বিশ্বে নতুন বাজার ধরা, রপ্তানিযোগ্য পণ্য নির্বাচন কিংবা প্রয়োজনে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে আলাপ-আলোচনা সবকিছুই আজকাল তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদন হয়।
অতীতের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, বিশ্বে প্রায় তিন মিলিয়ন আইটি পেশাজীবীর প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি দাঁড়িয়েছে। যদি বিশ্ব চাহিদার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের প্রায় ৫০ হাজার আইটি প্রফেশনাল সরবরাহ করতে পারা যায় তবে বর্তমান রেমিটেন্স বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। আমাদের দেশের প্রায় এক কোটি লোক বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে এবং তাদের পাঠানো রেমিটেন্স আমাদের জিডিপি-এর প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে থাকে। যদি এই শ্রমিকদের তথ্য প্রযুক্তিতে ন্যূনতম প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো সম্ভব হয় তাহলে তারা শুধু যে উন্নত জীবনযাপন করতে পারবে তাই নয়, আমাদের অর্থনীতিতেও অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবে।