বায়োমেট্রিক্স প্রকারভেদ, আঙ্গুলের ছাপ, হাতের ছাপ, চোখের মণি ও রেটিনা স্ক্যান, ডিএনএ গঠন, স্বাক্ষর, কন্ঠ শনাক্তকরণ, বায়োমেট্রিক্সের ব্যবহার
বায়োমেট্রিক্স (Biometrics)
সাধারণত জীববিদ্যার তথ্য নিয়ে যে বিজ্ঞান কাজ করে তাকে বায়োমেট্রিক্স বলে। বায়োমেট্রিক্স মানুষের আচরণগত বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে। এটা পর্যবেক্ষণকালীন একক অনুযায়ী কাজ করে থাকে। বায়োমেট্রিক্স এক ধরনের কৌশল যার মাধ্যমে মানুষের শারীরিক কাঠামো, আচার-আচরণ, বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতি দ্বারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। কোনো ব্যক্তিকে শনাক্তকরণ এবং তাদের প্রবেশ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার জন্য কম্পিউটার বিজ্ঞানে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। সঠিক ব্যক্তি শনাক্তকরণের পাশাপাশি শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে স্বয়ংক্রিয় নিরীক্ষা, নিরাপত্তা অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের জন্যও এটি ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং বলা যায়, মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গঠন বা আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শনাক্ত করার পদ্ধতিই বায়োমেট্রিক্স।
গ্রিক শব্দ ‘Bio’ (Life – প্রাণ) ও ‘metric’ (to measure-পরিমাপ করা) থেকে বায়োমেট্রিক্স (Biometrics) শব্দটির উৎপত্তি। বর্তমানে বায়োমেট্রিক্স সিকিউরিটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। কোনো স্থানের ডেটাবেজের বা তথ্য ব্যবস্থায় নিরাপত্তার জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে মানুষের ঐ বৈশিষ্ট্যগুলোই পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয় যা একক হিসেবে কাজ করে।
বায়োমেট্রিক্সের প্রকারভেদ :
দেহের গঠন ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতির প্রকারভেদ বর্ণনা করা হলো-
১. শারীরবৃত্তীয় (Physiological) বৈশিষ্ট্য : দেহের গঠন ও শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যগুলো হলো মানুষের মুখ বা চেহারা শনাক্তকরণ, আঙ্গুলের ছাপ, হাতের ছাপ, চোখের মণি ও রেটিনা স্ক্যান, ডিএনএ গঠন। নিচে এগুলো সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হলো :
মুখ শনাক্তকরণ (Face Recognition): মানুষের মুখ বা চেহারা শনাক্তকরণ হচ্ছে এমন এক ধরনের প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার, যার সাহায্যে মানুষের মুখের গঠন প্রকৃতি পরীক্ষা করে তাকে শনাক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির সরাসরি মুখের ছবিকে কম্পিউটারে সংরক্ষিত ছবির সাথে তুলনা করা হয়। এ পদ্ধতিতে দুই চোখের মধ্যবর্তী দূরত্ব, নাকের দৈর্ঘ্য ও ব্যাস, চোয়ালের কৌণিক পরিমাণ ইত্যাদি পরিমাপের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়।
ব্যবহার : সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে শনাক্তকরণে, বিল্ডিং বা কক্ষের প্রবেশদ্বারে পাহারা দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
সুবিধা : এ পদ্ধতি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং এতে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।
অসুবিধা : মুখের অভিব্যক্তির ভিন্নতার কারণে এ পদ্ধতিতে অনেক সময় মুখ শনাক্ত করা কষ্টকর। স্বল্প আলো, সানগ্লাস, টুপি, স্কার্ফ, দাড়ি, লম্বা চুল, মেকআপ ইত্যাদি পরিবেশে এ পদ্ধতি কম কার্যকর।
আঙ্গুলের ছাপ (Finger Print) :
আঙ্গুলের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার হচ্ছে এমন একটি ডিভাইস যার সাহায্যে মানুষের আঙ্গুলের ছাপ ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে তা পূর্ব থেকে সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপের সাথে মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার’ নামক যন্ত্রের মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপকে ডিজিটাল ডেটায় রূপান্তর করা হয়। বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করার পূর্বে ব্যবহারকারীর আঙ্গুলের ছাপ ডেটাবেজে সংরক্ষণ করতে হয়। পরবর্তীতে ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার আঙ্গুলের নিচের অংশের ত্বককে রিড করে সংরক্ষিত ছাপের সাথে তুলনা করে। রিডারটি ত্বকের টিস্যু ও ত্বকের নিচের রক্ত সঞ্চালনের উপর ভিত্তি করে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে।
ব্যবহার : নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণে, ব্যাংকিং পেমেন্ট সিস্টেমে, আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণে, DNA শনাক্তকরণ কাজে এ পদ্ধতিটি অধিক ব্যবহৃত হয়।
সুবিধা : এ পদ্ধতিতে খরচ তুলনামূলক কম, সময়ও কম লাগে। আঙ্গুলের ছাপ কখনো পরিবর্তন হয় না বলে এ পদ্ধতির সফলতা প্রায় শতভাগ।
অসুবিধা : আঙ্গুলে ক্ষত থাকলে বা কেটে গেলে, আঙ্গুল শুষ্ক বা ময়লা লেগে থাকলে এ পদ্ধতি সঠিক ফল প্রদর্শন করে না।
হাতের ছাপ বা হ্যান্ড জিওমেট্রি (Hand Geometry) :
প্রতিটি মানুষের হাতের আকৃতি ও জ্যামিতিক গঠন পরস্পর থেকে আলাদা। হাতের ছাপ বা হ্যান্ড জিওমেট্রি পদ্ধতিতে বায়োমেট্রিক্স ডিভাইস দ্বারা মানুষের হাতের আকৃতি বা জ্যামিতিক গঠন ও সাইজ নির্ণয়ের মাধ্যমে মানুষকে শনাক্ত করা যায়। এ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর হাতের ছাপ রিডারের নির্দিষ্ট স্থানে রাখার পর ৫ সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যে ডেটাবেজ সংরক্ষিত মানের সাথে প্রাপ্ত মানের পরীক্ষা করে ফলাফল প্রদান করে।
ব্যবহার : বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবিদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে, বিমান বন্দরে আগমন-নির্গমনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে এ পদ্ধতি কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আদালতে আসামী শনাক্তকরণে, বিভিন্ন ডেটা সেন্টারে, জাতীয় পরিচয়পত্রে, মোবাইল সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে হ্যান্ড জিওমেট্রির ব্যবহার সর্বাধিক।
সুবিধা : এ পদ্ধতি ব্যবহার করা সহজ। এক্ষেত্রে অল্প মেমোরির প্রয়োজন হয়।
অসুবিধা : এ পদ্ধতির ইন্সটলেশন খরচ বেশি, ডিভাইসের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। আথ্রাইটিস বা বাতের রোগীদের জন্য এটি উপযোগী নয়। ফিঙ্গার প্রিন্টের চেয়ে এর ফলাফলে সূক্ষতা কম।
চোখের মণি ও রেটিনা স্ক্যান (Iris and Retina Scan) : একজন মানুষের চোখের মণির দৃশ্যমান রঙিন অংশ অপর কোনো মানুষের চোখের মনির সাথে মিল পাওয়া যায় না। এটি অদ্বিতীয় ও স্থায়ী। চোখের মণির চারপাশে বেষ্টিত রঙিন বলয় বিশ্লেষণ করে এ পদ্ধতিতে শনাক্তকরণ করা হয়। এ পদ্ধতিতেই চোখ ও মাথাকে স্থির করে একটি ক্যামোরসম্পন্ন ডিভাইসের সামনে দাড়াতে হয়। এতে প্রায় ১ থেকে ১০ সেকেন্ড সময় লাগে। পূর্ব থেকে ধারণ করা চোখের আইরিসের প্যাটার্নের সাথে মিলিয়ে শনাক্তকরণ করা হয়।
ব্যবহার : আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে, মিলিটারিতে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
সুবিধা : এ পদ্ধতিতে শনাক্তকরণে খুবই কম সময় (১ থেকে ১০ সেকেন্ড) লাগে। আঙ্গুলের ছাপ বা হাতের ছাপের তুলনায় এ পদ্ধতির ফলাফলের সুক্ষতা তুলনামূলকভাবে বেশি। এছাড়া এটি নিরাপত্তামূলক শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, যা স্থায়ী এবং দৃশ্যমান।
অসুবিধা : এ পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং তুলনামূলকভাবে বেশি মেমোরির প্রয়োজন হয়। চশমা ব্যবহারকারীদের জন্য এ পদ্ধতিতে সমস্যা হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে চোখের ক্ষতি হয়।
ডিএনএ গঠন (DNA Structure) : স্ট্রাকচারাল বায়োলজির ক্ষেত্রে ডিএনএ (DNA – Deoxyribo Nucleic Acid) এর গঠন এবং বিভিন্ন অণুর মধ্যে আন্তঃসম্পর্কীয় বিষয়ে মডেলিং ও সিম্যুলেশন তৈরিতে এ কৌশল সহায়তা প্রদান করে। মানুষের শরীরের মূল অংশ হচ্ছে DNA এবং এই DNA-ই প্রতিটি মানুষের বংশ পরিচয় নিয়ন্ত্রণ করে। এক ফোঁটা রক্ত বা চুলের একটি অংশ থেকেও DNAটেস্টের মাধ্যমে মানুষের পরিচয় বের করা সম্ভব। DNA টেস্টকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন-
১. DNA প্রোফাইলিং, ২. DNA টাইপিং ও ৩. জেনেটিক ফিঙ্গার প্রিন্ট ইত্যাদি।
ব্যবহার : পিতৃত্ব নির্ণয়ে, অপরাধী শনাক্তকরণে, বিকৃত শবদেহ শনাক্তকরণে, লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের জিনগত মিল শনাক্তকরণে এ পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত হয়।
সুবিধা : ডিএনএ পদ্ধতি প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। পদ্ধতিগত কোনো ত্রুটি না থাকলে এ পদ্ধতিতে শনাক্তকরণে সফলতা শতভাগ।
অসুবিধা : এ পদ্ধতিতে খরচ অনেক বেশি। মিশ্র নমুনা থেকে DNA প্রোফাইলিং করা খুব কঠিন। সহোদর যমজদের ক্ষেত্রে DNA ফিঙ্গার প্রিন্ট সম্পূর্ণ এক হয় বলে কার্যকারিতার সফলতা দেখা যায় না। পরীক্ষাগারে কর্মীদের দক্ষতা, পারদর্শিতা এবং সর্তকতার অভাবে ফলাফলের উপর প্রভাব পড়ে।
২. আচরণগত (Behavioral) বৈশিষ্ট্য : মানুষের আচরণগত বৈশিষ্টের ভিত্তিতে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি কীস্ট্রোক, স্বাক্ষর, কন্ঠ শনাক্তকরণ ইত্যাদি আলোকে হতে পারে। নিচে এগুলো সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হলো :
কীস্ট্রোক (Keystroke) : কীস্ট্রোক হচ্ছে বিস্তারিত সময় জ্ঞানের তথ্য বিবরণী। যখন কোন ব্যক্তি কম্পিউটার কীবোর্ডে কাজ করে, তখন প্রত্যেক ‘কী’ তে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলে তা সঠিক বিবরণ দেয়। নির্দিষ্ট কোনো পাসওয়ার্ড যা টাইপ করে এন্ট্রি করা হয় এবং বিশ্লেষণ করা হয়।
ব্যবহার : কীবোর্ড ব্যবহার করে কাজের মাত্রা নির্ধারণ, কী-এর গতি নির্ধারণ করে তথ্য পাওয়া যায়।
সুবিধা : এ পদ্ধতিতে ডেটা বিশ্লেষণ করা সহজ।
অসুবিধা : এক্ষেত্রে অনেক সময় পাসওয়ার্ড এলোমেলো হয়ে যায়।
স্বাক্ষর (Signature) : এটি একটি সর্বস্তরের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। বিভিন্ন মানুষের হাতের স্বাক্ষর বিভিন্ন ধরনের হয়। একজনের স্বাক্ষরের সাথে অন্যজনের স্বাক্ষর হুবহু মিল হয় না। স্বাক্ষর শনাক্তকরণের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর হাতের লেখা পরীক্ষা করা হয়। স্বাক্ষরের আকার, লেখার গতি, সময় এবং কলমের চাপকে পরীক্ষা করে ব্যবহারকারীর স্বাক্ষর শনাক্তকরণ করা হয়। একটি স্বাক্ষরের সকল প্যারামিটার ডুপ্লিকেট করা অসম্ভব। এ পদ্ধতিতে বিশেষ ধরনের একটি কলম এবং প্যাড বা ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। ব্যবহার : স্কুল, কলেজে, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানে, সরকারি অফিস-আদালতে শনাক্তকরণের জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
সুবিধা : এ পদ্ধতিতে ব্যবহারের খরচ কম, এছাড়া শনাক্তকরণে সময় কম লাগে।
অসুবিধা : যারা স্বাক্ষর জানেন না তাদের জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না। এছাড়া এ পদ্ধতির ফলাফলের সুক্ষতা ফিঙ্গার প্রিন্টের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম।
কন্ঠ শনাক্তকরণ (Voice Recognition) : প্রত্যেক মানুষের কন্ঠের ধ্বনির বৈশিষ্ট্য, সুরের উচ্চতা, সুরের মূর্ছনা, স্পন্দনের দ্রুততা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে শনাক্তকরণ করা হলে সামাজিকভাবে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয় এবং সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমের নিরাপত্তায় এ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতিতে প্রথমে সকল ব্যবহারকারীর কণ্ঠকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর সাহায্যে সিগন্যালে রূপান্তর করে ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে ভয়েস রেকর্ডারের সাহায্যে ব্যবহারকারীর ভয়েস রেকর্ড করা হয়। অতঃপর প্রোগ্রামের সাহায্যে উভয়ের তুলনা করে শনাক্ত করা হয়।
ব্যবহার : বড় বড় প্রতিষ্ঠানে সময় ও উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ পদ্ধতির ব্যবহার কম খরচে বাস্তবায়ন করা যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করে। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান টেলিফোনের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে।
সুবিধা : এ পদ্ধতিতে শনাক্তকরণ করা হলে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। এ পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহজ এবং খরচও কম।
অসুবিধা : কখনো কেউ অসুস্থ হলে যেমন- গলা ব্যথা, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি ইত্যাদি জনিত কারণে কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে গেলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না। ভয়েস রেকর্ডার ব্যবহার করে কোন ব্যক্তির কণ্ঠ নকল করা সম্ভব।
বায়োমেট্রিক্সের ব্যবহার (Uses of Biometrics) : বায়োমেট্রিক্স নির্দিষ্ট সেন্সর ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তির একক বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে। যদি কোনো ব্যবহারকারী অনুপ্রবেশ করতে চায় তার ঐ বৈশিষ্ট্য স্ক্যান করার পর সিস্টেম পরীক্ষা করে সঠিক হলে প্রবেশ করার অনুমতি প্রদান করে থাকে। বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তি ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য ব্যবহারগুলো হলো-
সময়, উপস্থিতি ও প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ
সাময়িক মুক্তি ও গৃহবন্ধী নিয়ন্ত্রণ
নিরাপত্তা কর্মীর চলাচল নিয়ন্ত্রণ
ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ
গাড়ি প্রবেশ ও অগ্নি নিরাপত্তা
ব্যাংকের লেনদেনে নিরাপত্তা
ক্যাবল টিভি ও সেলুলার ফোনের নিরাপত্তা
ATM এ লেনদেন যাচাইকরণ
জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধন তৈরিতে
কারো পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব শনাক্তকরণে
DNA শনাক্ত করে কারো পরিচয় জানতে
মোবাইল ফোনের সিম কার্ড নিবন্ধনের জন্য
কম্পিউটার ডেটাবেজ ও নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ।
বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তি সাধারণত দুই ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
১. ব্যক্তি শনাক্তকরণ (Identification) ও ২. সত্যতা যাচাই (Verification)।
১. ব্যক্তি শনাক্তকরণ (Identification) : বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে ব্যক্তির অদ্বিতীয় কোনো বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করে তা ঐ ব্যক্তির নামের বিপরীতে সিস্টেমের কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে টোকেন নির্ভর শনাক্তকরণ পদ্ধতি যেমন- লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা NID কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কম্পিউটার সিস্টেমে ইউজার নেইম ও পাসওয়ার্ড বা পিন নম্বর ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটার পদ্ধতিতে নিখুঁত নিরাপত্তার জন্য বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে মানুষের বায়োলজিক্যাল ডেটা কম্পিউটারের ডেটাবেজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। )
বড় বড় প্রতিষ্ঠানের দরজায় ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সর লাগানো থাকে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে কারা প্রবেশ করতে পারবে আগে থেকেই তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে কম্পিউটারে বিশেষ নিরাপত্তা সফটওয়্যারের ডেটাবেজে সংরক্ষিত করে রেখে দেওয়া হয়। দরজার সামনে দাঁড়াতেই দরজা খোলার ক্ষেত্রে ব্যক্তি শনাক্তকরণে বিশেষ কম্পিউটারে প্রসেস করা হয়। এজন্য কম্পিউটার সিস্টেমে সেন্সর, এক্সট্রাকটর, টেমপ্লেট জেনারেটর, ম্যাচার ও বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। সেন্সর মূলত শনাক্ত করে এক্সট্রাকটর শনাক্তকরণ ডেটা প্রিপ্রসেস করে বায়োমেট্রিক্স সিস্টেমে দেয়, টেমপ্লেট জেনারেটর তা টেস্ট করে।
২. সত্যতা যাচাই (Verification) : এ পদ্ধতিতে পূর্ব থেকেই কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে সংরক্ষিত কোনো মানুষের অদ্বিতীয় এক বা একাধিক বায়োমেট্রিক্স বৈশিষ্ট্যের সাথে পরীক্ষাধীন ব্যক্তির বর্তমান বায়োমেট্রিক্স ডেটার তুলনা করে ঐ ব্যক্তির সত্যতা নির্ধারণ করা হয়। যেমন- ফিঙ্গার প্রিন্ট শনাক্তকরণ পদ্ধতির কথা বলা যাক। সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপে ভিন্নতা দিয়েছেন। মানুষের আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসই অদ্বিতীয় অর্থাৎ একজন মানুষের আঙ্গুলের ছাপ অন্যজনের সাথে মিলবে না। ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার বায়োমেট্রিক্স সিস্টেমটি বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি। এতে আগে থেকেই মানুষের আঙ্গুলের ছাপ মেশিনে ধারণ করে রাখা হয়।
পরবর্তীতে এই রিডার আঙ্গুলের নিচের অংশে ত্বকে রিড করে সংরক্ষিত ছাপের সাথে তুলনা করে এবং মিলে গেলে অ্যাকসেস প্রদান করে। এভাবেই সঠিক ব্যক্তি শনাক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করে এবং সফলতার পরিমাণ অনেক বেশি।
বায়োমেট্রিক্স -এর সুবিধা :
১. যেহেতু সিস্টেমটি অনুভূতিহীন সুতরাং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই এবং নিরাপত্তা ও নিখুঁত।
২. প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও সার্বিকভাবে খরচ কম।
বায়োমেট্রিক্স -এর অসুবিধা :
১. আলোর প্রতিফলন মুখমন্ডল ছবির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, ফলে মাঝে মাঝে সিস্টেমটি মুখমন্ডল চিনতে পারে না।
২. শারীরিক ফিটনেসের ওপর কন্ঠস্বরের তীব্রতার ওঠানামা হয়। ফলে কোনো কোনো সময় সিস্টেমটি কণ্ঠস্বর ঠিকমতো
চিনতে পারে না।
৩. প্রতিটি স্বাক্ষর একই রকম হয় না, ফলে এক্ষেত্রেও সমস্যা হয়।
৪. এ সিস্টেমের ইনস্টলেশন খরচ বেশি।
৫. সিস্টেমটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য দক্ষ লোকের প্রয়োজন।