উচ্চশিক্ষার জন্য ফ্রান্স বা স্পেনে যেতে চান?
প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার জন্য অসংখ্য শিক্ষার্থী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়তে যাচ্ছেন।
১. স্নাতকের জন্য কীভাবে আবেদন করা যায়?
ফ্রান্স ও স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর পর্যায়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করা যায়। পোল্যান্ড ও পর্তুগাল বাদে স্পেন, ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় অন্যান্য দেশে ব্যাচেলর পর্যায়ে বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ কম। ফ্রান্সে সেপ্টেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারেন। স্পেনে এপ্রিল মাসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদনপ্রক্রিয়া ভিন্ন। ফ্রান্সের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ জানা যাবে এই ওয়েবসাইটে।
২. বৃত্তির সুযোগ কেমন?
মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যথেষ্ট বৃত্তির সুযোগ আছে। তবে সেটা নির্ভর করে আপনার স্নাতকের বিষয়ের ওপর। প্রকৌশল ও জীববিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৃত্তির সুযোগ বেশি। ফ্রান্সের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইফেল স্কলারশিপ (www.campusfrance.org), স্পেনে সরকারি বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়। বিভিন্ন দেশের সরকারি বৃত্তির সুযোগের খোঁজ পাওয়া যাবে www.shed.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে।
৩. সরকারি বৃত্তির জন্য কী কী লাগে?
সরকারি বৃত্তি পেতে স্নাতক পর্যায়ে ভালো ফল ও গবেষণা প্রবন্ধের প্রকাশনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যাঁরা মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে পড়তে চান, তাঁদের জন্য কাজ ও গবেষণার অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি। কোনো কোনো বৃত্তির ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে পড়তে অনেক ক্ষেত্রে চাকরির অভিজ্ঞতা, গবেষণা ও সৃষ্টিশীল কাজকে মূল্যায়ন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভালো মোটিভেশন লেটার, সিভি ও বৃত্তির সময় দেওয়া সাক্ষাৎকারের পারফরম্যান্সও বৃত্তি পাওয়ার জন্য সহায়ক হয়।
৪. সরকারি বৃত্তি ছাড়া কী বৃত্তি আছে?
ফ্রান্সে ভিন্ন ভিন্ন বৃত্তি আছে। যেমন ইরাসমস মুন্ডাস স্কলারশিপ, আইফেল এক্সেলেন্স স্কলারশিপ, স্টেট ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্কলারশিপ। প্রতিটি স্কলারশিপের জন্য সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতার ভিন্নতা রয়েছে। স্পেনের স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলে পিএইচডি গবেষণায় সাধারণত প্রতিবছর অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসে ইরাসমস বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়। স্নাতক শেষ বর্ষে থাকা অবস্থায়ও আবেদনের সুযোগ আছে। বৃত্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রতি মাসে ১ হাজার ৪০০ ইউরো পায়। বছরে তিন হাজার ইউরো ভ্রমণ খরচ, এককালীন এক হাজার ইউরোসহ বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন খরচ ও গবেষণা খরচ পেয়ে থাকে।
৫. আইইএলটিএস স্কোর কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
সাধারণত আবেদনের জন্য গড় স্কোর ৬ দশমিক ৫ থাকলে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যায়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএস ছাড়াই আবেদন করা সম্ভব। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি কিংবা স্প্যানিশ ভাষাশিক্ষার সনদ চায়। স্থানীয় ভাষায় দক্ষতা তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কোর্সের সুযোগ থাকে। ফরাসি ভাষার আন্তর্জাতিক দক্ষতা সনদ ডিইএলএফ ও স্প্যানিশ ভাষার আন্তর্জাতিক দক্ষতা সনদ ডিইএলই স্কোর থাকলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি ভর্তির সুযোগ থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশিক্ষা কেন্দ্রে ফরাসি ও স্প্যানিশ শেখার সুযোগ আছে। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকায় ফরাসি ভাষা শিখতে পারেন।
৬. জীবনযাত্রার ব্যয় কেমন?
জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে শহরের ওপর। কিছু শহরে ব্যয় অনেক বেশি। যেমন প্যারিস। প্যারিসের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পড়ছেন, তাদের খরচ পড়ে মাসে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ ইউরো। নিশ্যে, লিও ও টুলুজের মতো শহরে ৮০০ থেকে ১ হাজার ইউরো। মজার বিষয় হচ্ছে, ফ্রান্সে বাসাভাড়ার ৪০-৫০ শতাংশ সরকার বহন করে। আর খাওয়া ও আনুষঙ্গিক খরচ সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২০০ পাউন্ড। স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পড়বেন, মাদ্রিদ বা বার্সেলোনায় থাকলে তাঁদের মাসে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ ইউরোর মতো খরচ হবে। সেভিল, কাদিজ বা ভ্যালেন্সিয়ার মতো শহরে থাকলে খরচ পড়বে ৭০০-৯০০ ইউরো। স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব ওভিয়েডোতে পরিবেশ ভালো। বাসাভাড়া কমবেশি ৩০০ ইউরো। খাবার খরচ মাসে প্রায় ২০০ ইউরোর মতো। ১ হাজার ইউরো হাতে থাকলে মোটামুটি আরামে মাস চলে যায়।
৭. কেউ বৃত্তি ছাড়া পড়তে চাইলে খরচ কেমন?
বৃত্তি ছাড়া পড়তে চাইলে দুই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টিউশন ফি নেই, কোথাও আবার আছে। ফ্রান্সে স্নাতক পড়তে বছরে ২ হাজার ৮০০ ইউরোর মতো খরচ পড়বে। মাস্টার্সের বিভিন্ন বিষয়ে টিউশন ফি বিষয়ভেদে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ১০ হাজার ইউরো। স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য খরচ পড়বে ৭৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ ইউরো। আর মাস্টার্সের জন্য খরচ পড়ে ১ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ ইউরো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ আরও বেশি।
৮. পড়াশোনার মান কেমন?
ফ্রান্সে পড়াশোনা অনেক প্রতিযোগিতামূলক। গবেষণাধর্মী বিষয়ে পড়ার চাপ বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ক্লাস থাকে। এর মধ্যেই ক্লাস, ল্যাব, প্রেজেন্টেশন, সেমিনার ও প্রজেক্ট ওয়ার্ক থাকে। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই বিশ্বমানের। স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, গণিত, জীববিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পড়তে আসছেন। গবেষণার সুযোগ এখানে বিস্তৃত।
৯. পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ আছে?
ফ্রান্সে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান। ৮০ থেকে ১২০ ইউরো পর্যন্ত সপ্তাহে আয়ের সুযোগ থাকে। অন্যদিকে স্পেনে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ আছে, তবে সেটা নির্ভর করে শহর আর ভাষাদক্ষতার ওপর। বড় শহরে না থাকলে কিংবা ভাষা না জানলে কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। স্পেনে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার মতো কাজের সুযোগ পান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। মাসে কমবেশি ৪৫০ ইউরো আয়ের সুযোগ থাকে।
১০. পড়ালেখা করে চাকরির সুযোগ কেমন?
ফ্রান্স ও স্পেনে পড়াশোনা শেষে নানা ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ আছে। ফরাসি সরকার যথেষ্ট সুযোগ দেয়। কোনো শিক্ষার্থী যদি পড়াশোনা ভালোভাবে শেষ করেন ও ভাষার দক্ষতা অর্জন করেন, তাহলে ফ্রান্সে চাকরি পাওয়া সম্ভব। উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করতে পারেন। অন্যদিকে স্পেনে পড়াশোনা শেষ করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা দুই বছর চাকরি করতে পারেন। বার্সেলোনার মতো বড় শহরে স্প্যানিশ ভাষা না জানলেও চাকরির সুযোগ পাবেন। কিন্তু অন্যান্য শহরে চাকরির সুযোগ পেতে স্প্যানিশ জানা বেশ জরুরি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের পাশাপাশি ব্যাংক, প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থায় কাজের সুযোগ আছে। স্পেনে অন্যান্য দেশের চেয়ে বেকারত্বের হার বেশি, তাই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাজের প্রতিযোগিতা বেশি।