ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি (Data Transmission Method)

ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি:

যে প্রক্রিয়ায় ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেমে প্রেরক যন্ত্র হতে ডেটা গ্রাহক যন্ত্রে ট্রান্সমিট হয় তাকে ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি বা মেথড বলে। ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে কম্পিউটার থেকে কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইসে সিগন্যাল বিটের মাধ্যমে ট্রান্সমিট হয়। এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডেটা ট্রান্সমিশন হওয়ার সময় অবশ্যই দুই কম্পিউটারের মধ্যে এমন একটি সমঝোতা থাকা দরকার যাতে সিগন্যাল বিটের শুরু ও শেষ বুঝতে পারে। বিটের শুরু ও শেষ বুঝতে না পারলে গ্রাহক কম্পিউটার সে সিগন্যাল থেকে ডেটা পুনরুদ্ধার করতে পারে না।

ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতির প্রকারভেদ :

 ১. প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশন (Parallel Data Transmission)

২. সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন (Serial Data Transmission)

১. প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশন (Parallel Data Transmission) : প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে প্যারালাল বা সমান্তরালভাবে ডেটা চলাচলের পদ্ধতিকে প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশন বলে। চিত্রানুযায়ী এ ট্রান্সমিশনে ক্যাবলের মধ্য দিয়ে 1 বাইট বা 8টি বিট (b1, b2, b3, b4, b5, b6, b7, b8)
পাশাপাশি 8টি পৃথক লাইনের মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করে।

সুবিধা :
এটি দ্রুত গতির ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি। কারণ এতে একই সাথে অনেক বিট ডেটা যুগপৎ চলাচল করতে পারে।

অসুবিধা : এ পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কারণ এ পদ্ধতিতে একই সময়ে n বিট ডেটা ট্রান্সমিশন করার জন্য পৃথক nটি লাইন প্রয়োজন হয় না।

২. সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন (Serial Data Transmission) :

প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে 1টি বিটের পর 1টি বিট চলাচলের পদ্ধতিকে সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন বলে। চিত্রানুযায়ী এ ট্রান্সমিশনে ক্যাবলের মধ্য দিয়ে একটির পর একটি অর্থাৎ 1বিট করে 8বিটের (b1, b2, b3, b4, b5, b6, b7, b8) ডেটা পর্যায়ক্রমে আদান-প্রদান করে। মডেম, মাউস প্রভৃতি যন্ত্রে এ ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে ডেটা আদান প্রদান করে।

সুবিধা : সিরিয়াল বা অনুক্রম ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে কম খরচে ট্রান্সমিশন লাইন অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করা যায়। এছাড়া একটিমাত্র লাইন ব্যবহারের কারণে ট্রান্সমিশনে বিলম্বজনিত কোনো সিনক্রোনাইজেশনের প্রয়োজন হয় না।

অসুবিধা : একই সময়ে একটিমাত্র বিট উৎপন্ন হওয়ায় এ প্রক্রিয়াটি ধীর গতিসম্পন্ন।

সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে প্রেরক থেকে প্রাপকে ট্রান্সমিশন হওয়ার সময় অবশ্যই এমন একটি সমন্বয় থাকা দরকার যাতে সিগন্যাল বিটের শুরু ও শেষ বুঝতে পারে। বিটের শুরু ও শেষ বুঝতে না পারলে প্রাপক সে সিগন্যাল থেকে ডেটা পুনরুদ্ধার করতে পারে না।

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Asynchronous Transmission) :

যে ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেমে প্রেরক থেকে ডেটা গ্রাহকে ক্যারেক্টার বাই ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট হয় তাকে এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন বলে। একটি ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট হওয়ার পর আরেকটি ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের বিরতি সময় সমান না হয়ে ভিন্ন ভিন্নও হতে পারে। ক্যারেক্টারসমূহের ট্রান্সমিশনের সময় বিরতি সমান না হওয়ায় এর ডেটা স্থানান্তরের সময় বেশি লাগে। যেমন- কীবোর্ড দ্বারা ব্যবহারকারীর ডেটা এন্ট্রির গতি কখনো এক রকম হয় না।        

প্রতিটি ক্যারেক্টারের শুরুতে একটি স্টার্ট বিট এবং শেষে একটি অথবা দুটি স্টপ বিট ট্রান্সমিট করা হয়। এ জন্য এ ধরনের ডেটা ট্রান্সমিশনকে স্টার্ট/স্টপ ট্রান্সমিশনও বলা হয়।

ডেটা ট্রান্সমিশনের দক্ষতা :

প্রকৃত ডেটা ও মোট ডেটার পরিমাণের অনুপাতকে ডেটা ট্রান্সমিশনের দক্ষতা বলে।

ডেটা ট্রান্সমিশনের দক্ষতা = প্রকৃত ডেটা/মোট ডেটা ´ 100

এখানে, প্রকৃত ডেটা = ইনপুট ডেটা যা ট্রান্সমিট করা হয়।

         মোট ডেটা = প্রকৃত ডেটা + ওভারহেড ডেটা

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে 1 Byte ডেটা স্থানান্তরে অতিরিক্ত বিট প্রয়োজন

= 1 Start bit + 1 Byte + 2 Stop bits

= 1 Start bit + 8 bits + 2 stop bits

  = 11 bits

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনে প্রকৃত ডেটা = 8 bits

                        মোট ডেটা = = 11 bits

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের দক্ষতা = প্রকৃত ডেটা/মোট ডেটা ´ 100

          = ´ 100 = 72.73% (প্রায়)

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্য :

-প্রেরক যেকোনো সময় ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারবে এবং গ্রাহক তা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করবে। যেমন- যখন কীবোর্ডের কীতে চাপ দেওয়া হয় তখন প্রসেসর তা গ্রহণ করে এবং মনিটরে প্রদর্শিত হয়।

-ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য প্রেরকের কোনো প্রাথমিক স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হয় না।

-যখন ডেটা চলাচল বন্ধ থাকে তখন মাধ্যমটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে।

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের সুবিধা :

– যেকোনো সময় প্রেরক ডেটা পাঠাতে পারে এবং গ্রাহক তা গ্রহণ করতে পারে।

-ডেটা ট্রান্সমিশনের সময় প্রেরকের কোনো প্রাথমিক স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হয় না।

-অল্প পরিমাণ ডেটা ট্রান্সমিটের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে ব্যবহার সুবিধাজনক।

-বাস্তবায়ন করা সহজ ও ব্যয় কম হয়।

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের অসুবিধা :

-ডেটা ট্রান্সমিশনের গতি তুলনামূলকভাবে কম।

-সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের চেয়ে এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের দক্ষতা কম।

-ডেটা স্থানান্তরের কাজ বন্ধ থাকলে বা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে স্যাটেলাইট মাধ্যম অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের ব্যবহার :

-কম্পিউটার থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে প্রেরণের জন্য কম্পিউটার থেকে মডেমে ডেটা স্থানান্তরিত হয়।

-কম্পিউটার থেকে প্রিন্টারে ডেটা কমিউনিকেশনের সময় এর ব্যবহার দেখা যায়।

-পাঞ্চ কার্ড রিডার থেকে কম্পিউটারে, কম্পিউটার থেকে পাঞ্চ কার্ড রিডারে।

– টার্মিনাল হতে সিপিইউতে ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

– কীবোর্ড থেকে কম্পিউটারে ডেটা স্থানান্তরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page

Scroll to Top