ওয়েব পেইজ ডিজাইনিং (Web Page Designing) ও ওয়েবসাইট পাবলিশিং (Website Publishing)
ওয়েব পেইজ ডিজাইনিং (Web Page Designing) ও ওয়েবসাইট পাবলিশিং (Website Publishing)
ওয়েব পেইজ ডিজাইনিং (Web Page Designing)
ওয়েব পেইজ ডিজাইন হচ্ছে একটি ওয়েব পেইজের জন্য বাহ্যিক কাঠামো তৈরি করা, যেখান থেকে ব্যবহারকারী সহজে প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেতে পারে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নির্ধারণ, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ওয়েব পেইজ প্রদর্শন এই তিনটি বিষয়ের সম্মিলিত রূপ।
ওয়েব পেইজটি কি রকম হবে সেই মোতাবেক পরিকল্পনা গ্রহণ করে একটি Editing সফট্ওয়্যারে বিভিন্ন HTML ট্যাগ লিখতে হবে এবং ফাইলটির নামের সাথে “.htm” অথবা “.html” বর্ধিতাংশ লিখে একটি নির্দিষ্ট ফোল্ডারে Save করতে হবে। ব্রাউজিং সফট্ওয়্যার ব্যবহার করে ফাইলটি ঐ নির্দিষ্ট ফোল্ডার থেকে ওপেন করলেই পেইজটির আউটপুট দেখাবে।
সুন্দর, আকর্ষণীয় এবং অর্থপূর্ণ ওয়েব পেইজ তৈরি করতে হলে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে কাজ করতে হয়। ধাপগুলো হলো-
১. পরিকল্পনা : একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ওয়েবসাইটের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, সম্ভাব্য ব্যবহারকারির সংখ্যা, প্রদর্শিতব্য বিষয়বস্তু, ওয়েবসাইটের গুণগতমান ইত্যাদি বিষয়ের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।
২. ডিজাইন : আমরা যখন কোনো ওয়েব পেইজ ডিজাইন করি তখন আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় সব উপকরণ/ কনটেন্ট সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ পেইজ তৈরি করতে টেক্সট, চিত্র ইত্যাদি ঠিক করতে হবে। প্রথমেই সুন্দর ও অর্থবোধক একটি টাইটেল দিতে হবে যাতে ব্যবহারকারী সহজে বুঝতে পারে। হোম পেইজে বড় আকারের বর্ণনা দেওয়া ঠিক নয়, ছোট ছোট প্যারা আকারে দেওয়া উচিত।
চিত্র: ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েব পেইজ
৩. থিম : থিম হিসেবে সুন্দর, অর্থপূর্ণ, বৈশিষ্ট্যযুক্ত কোনো টেক্সট/ এলিমেন্ট ওয়েবসাইটের প্রত্যেক পেইজে একই স্থানে প্রদর্শিত হয়। গ্রুপ আইটেমগুলো একসাথে রাখা উচিৎ এবং যথাসম্ভব ফাঁকা স্থানে রাখা উচিত যাতে ব্যবহারকারী সহজে বুঝতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক টেক্সটগুলো বোল্ড করা এবং ছবি ও টেক্সট ব্যাকগ্রাউন্ড কালার থেকে আলাদা হওয়া উচিৎ যাতে সহজে ব্যবহারকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।
৪. অ্যালাইনমেন্ট : ওয়েব পেইজ তৈরির সময় টেক্সট অ্যালাইনমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে সম্পূর্ণ পেইজে একই ধরনের অ্যালাইনমেন্ট ব্যবহার করতে হবে এমনটি নয়। ওয়েব পেইজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন অ্যালাইনমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. স্লাইসিং : ওয়েবের ইন্টারফেজ তৈরির আগে কাগজ-কলমে একটি খসড়া ডিজাইন করে নিলে মূল ডিজাইন তৈরি করা সহজ হয় এবং সময়ও কম লাগে। ইন্টারফেজের ব্যানার, বাটন, চিত্র কোথায় কী মাপের হবে তা নির্দিষ্ট করতে হবে। পেইজকে একাধিক রো ও কলামে ভাগ করা যায়। কয়টি অংশে ভাগ করা হবে, কোন অংশ কতটুকু বড় হবে এবং কোন অংশে কী প্রদর্শিত হবে তা পূর্বেই ঠিক করে নিতে হবে।
৬. কোড লেখা ও এডিট করা : ওয়েব পেইজের বেশির ভাগ কাজই HTML ব্যবহার করে করা যায়, তবে ডাইনামিক ওয়েব পেইজ ডিজাইন করতে চাইলে বিভিন্ন ধরনের ওয়েব প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করতে হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো Javascript, Python, ASP, JSP ইত্যাদি। HTML
এ লেখা কোড যেকোনো এডিটর ব্যবহার করে সংশোধন বা পরিবর্তন করা যায়।
৭. টেক্সট : আগে থেকেই টেক্সট নির্ভুলভাবে লিখে ফাইলে রাখতে হয়। কোডিং করার সময় প্রয়োজনমতো বিভিন্ন স্থানে এসব টেক্সট বসানো হয়।
৮. ইমেজ : ইমেজ বা ছবির ক্ষেত্রে ফটোশপ থেকে ছবি সুন্দর করে এডিটিং করে সাইজ মতো তৈরি করে নিতে হয়। তবে অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছবির ফাইল যেন বড় না হয়।
৯. অ্যানিমেশন : অ্যানিমেশন এর জন্য এডোবি ফ্ল্যাশ সফটওয়্যার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের টুলস এর জন্য এ সফটওয়্যারে সবচেয়ে ভালো কাজ করা যায়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের .gif অ্যানিমেশনের জন্য এডোবি ফটোশপ ব্যবহৃত হয়।
১০. অডিও : ওয়েব পেইজে অডিও এর জন্য সাউন্ড গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ফরমেটে সাউন্ডকে সংরক্ষণ করে অ্যানিমেশনে ব্যবহার করা যায়।
১১. ভিডিও : ভিডিও এডিটিং এর জন্য এডোবি প্রিমিয়ার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। ভিডিওকে কনভার্ট করে প্রয়োজনীয় অংশটুকু ব্যবহার করা যায়।
১২. ডেটাবেজ অন্তর্ভুক্ত করা : ওয়েব পেইজ থেকে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার জন্য ডেটাবেজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবার ব্যবহারকারীর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য জানা এবং সংরক্ষণ করার জন্যও ডেটাবেজ প্রয়োজন। এজন্য বর্তমানে ওয়েব ডিজাইন করতে গেলে ডেটাবেজ ব্যবহারের গুরুত্ব দিতে হয়।
১৩. ওয়েব পেইজ টেস্টিং : ওয়েব পেইজ ডিজাইনের পর কোডিং করা এবং ডেটাবেজ অন্তর্ভুক্ত করার পর পরীক্ষা করতে হবে। এজন্য যেকোনো ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করে পেইজটি বার বার প্রদর্শন করে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে টেক্সট, ছবি, লিঙ্ক ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হবে।
১৪. প্রয়োজনীয় সফট্ওয়্যার : ওয়েব পেইজ তৈরির জন্য একটি এডিটিং সফট্ওয়্যার (যেমন- Notepad) এবং একটি ব্রাউজিং সফট্ওয়্যার (যেমন- Mozilla Firefox বা Google Chrome) প্রয়োজন হয়। ওয়েব পেইজ তৈরি করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন নেই। তবে অনলাইনে ওয়েব পেইজ দেখার জন্য ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয়।
১৫. নিরাপত্তা : ওয়েব পেইজের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাকিং ও ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওয়েবসাইটের নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়।
ওয়েবসাইট পাবলিশিং (Website Publishing)
ওয়েবসাইট পাবলিশিং-এর পরিপূর্ণ রূপ ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। কোনো ওয়েব পেইজকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়াকে ওয়েবসাইট পাবলিশিং বলে। দ্রুততম সময়ে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে হয়।
ওয়েবসাইট পাবলিশিং এর ধাপসমূহ-
ধাপ-১ : ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন : সুন্দর একটি নাম যা সহজে মনে রাখা যায় এবং অর্থবোধক হয় তা নির্বাচন করে সেই নামের ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
ধাপ-২ : ওয়েব পেইজ ডিজাইন : সুন্দর ওয়েব পেইজ তৈরি করতে টেক্সট, চিত্র ইত্যাদি ঠিক করতে হবে। প্রথমেই সুন্দর ও অর্থবোধক একটি টাইটেল দিতে হবে যাতে ব্যবহারকারী সহজে বুঝতে পারে। থিম, অ্যালাইনমেন্ট, স্লাইসিং, টেক্সট, ইমেজ, অ্যানিমেশন, অডিও, ভিডিও ইত্যাদির মাধ্যমে ওয়েব পেইজ ডিজাইন করতে হবে।
ধাপ-৩ : ওয়েব সার্ভারে পেইজ হোস্টিং : ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন ও ওয়েব পেইজ ডিজাইন সম্পন্ন করার পর নির্ভরযোগ্য কোনো সার্ভারে ওয়েবসাইট হোস্টিং করতে হয়। কয়েক ধরনের হোস্টিং হতে পারে।
ধাপ-৪ : সার্চ ইঞ্জিনের সাথে ওয়েবসাইট সংযুক্তকরণ : ওয়েবসাইটটি বেশি প্রচারমুখী করার জন্য সার্চ ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত করতে হয়। ফলে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে ওয়েবসাইটটি দেখা যাবে।